থাইরয়েডের সমস্যা আজকাল অনেকেরই পরিচিত। একবার এই রোগ শরীরে বাসা বাঁধলে জীবনযাত্রা প্রায় অস্থির হয়ে ওঠে। অল্পেই ক্লান্তি, কিছুতেই ওজন নিয়ন্ত্রণে না থাকা, অসময়ে চুল পড়া, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য হারানো—এই সমস্ত সমস্যার পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে থাইরয়েডের গোলমাল। সময় থাকতে এর চিকিৎসা না করালে এটি বড় আকার ধারণ করতে পারে। থাইরয়েডের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি হলেও, সামান্য সচেতনতা ও নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব।
থাইরয়েড গ্রন্থিটি আমাদের গলার শ্বাসনালির সামনের দিকে অবস্থিত। এই গ্রন্থি থেকে প্রধানত দুই প্রকার হরমোন—টি-থ্রি ও টি-ফোর ক্ষরিত হয়। আমাদের রক্তে এই হরমোন একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকে। থাইরয়েডের সমস্যা মূলত দুই ধরনের হয়—হাইপারথাইরয়েডিজম (Hormone-এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া) এবং হাইপোথাইরয়েডিজম (Hormone-এর পরিমাণ কমে যাওয়া)।
থাইরয়েড গ্রন্থির আল্ট্রাসাউন্ড, অ্যান্টি টিপিও অ্যান্টিবডি, থাইরয়েড স্টিমিউলেটিং ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। পরীক্ষায় থাইরয়েড ধরা পড়লেই, চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়া শুরু করা উচিত।
তবে থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক সময় এবং কিছু নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসকদের মতে, সকালে খালি পেটে থাইরয়েডের ওষুধ খেলে সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়. খাওয়ার পরে বা খাবারের সঙ্গে এই ওষুধ খেলে শরীরে সঠিকভাবে তা শোষিত হয় না। ফলে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নাও থাকতে পারে।
হাইপোথাইরয়েডিজমের ক্ষেত্রে, কোনো ব্যক্তি যদি সকালে খালি পেটে থাইরক্সিনের সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেন, তাহলে তার শরীরে অস্বস্তি হতে পারে। সেক্ষেত্রে ওষুধ দুটি ডোজে ভাগ করে খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন চিকিৎসক।
থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার সময় যে নিয়মগুলি মেনে চলা উচিত:
নির্দিষ্ট সময় মেনে চলুন: এই ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় মেনে চলাই ভালো। সকাল ৮টার ওষুধ যেন রোজ ৮টাতেই খাওয়া হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। কোনোদিন সকালে ওষুধ খেতে ভুলে গেলে, দুপুরের খাবারের দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পর খেতে পারেন।
খাওয়ার আগে বা পরে বিরতি: ওষুধ খাওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যে কিছু না খাওয়াই ভালো। এমনকি চা বা কফিও নয়!
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন: থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে উচ্চ মাত্রায় ক্যালসিয়াম রয়েছে এমন কোনো খাবার (যেমন দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য) খাবেন না।
অন্যান্য সাপ্লিমেন্ট থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন: এই ওষুধ খাওয়ার সময় অন্য কোনো সাপ্লিমেন্ট, যেমন আয়রন, ক্যালসিয়াম বা ভিটামিনের ওষুধ ভুলেও খাবেন না। যদি এই ধরনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়, তাহলে থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ার অন্তত চার ঘণ্টা আগে বা পরে খান।
নিয়মিত ওষুধ খান: বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ওষুধ সারা জীবন ধরে খেয়ে যেতে হয়। তাই পরীক্ষায় হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বন্ধ করা যাবে না। হরমোনের মাত্রা বেশি কমে বা বেড়ে গেলে ওষুধের ডোজ ঠিক করার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
উপরের সমস্ত নিয়মাবলী অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেনে চলা উচিত। থাইরয়েডের ওষুধ সঠিকভাবে খেলে এবং নিয়ম মেনে চললে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।