গ্রীষ্মকালে দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকার কারণে অনেকেরই ত্বক জ্বালা করে, লাল হয়ে ফুলে ওঠে এবং তাতে দাগ হয়। অনেকেই এই সমস্যাকে সাধারণ অ্যালার্জি ভেবে অবহেলা করেন, কিন্তু এটি একটি গুরুতর চর্মরোগের লক্ষণ হতে পারে। ভারতীয় চিকিৎসক ডা. গীতিকা গুপ্তার মতে, এই সমস্যাকে ‘রোসাসিয়া’ বলা হয়, যা বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে।
রোসাসিয়া শুধুমাত্র অতিরিক্ত গরমে বা ঘামের কারণে হয় না, বরং শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ বেড়ে গেলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ত্বকের ধরন এবং শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে এর কারণ ভিন্ন হতে পারে।
রোসাসিয়া রোগের প্রধান কারণসমূহ:
বংশগত কারণ (জেনেটিক্স): পরিবারে যদি কারো এই সমস্যা থাকে, তাহলে জেনেটিক কারণে তা বংশ পরম্পরায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই পরিবারের ইতিহাসে রোসাসিয়া থাকলে আগে থেকেই সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
জীবাণুর সংক্রমণ: মাথার চুলের স্ক্যাল্পে ‘ডেমোডিক্স মাইট’ নামে এক ধরনের জীবাণু থাকে। এই জীবাণু থেকে নির্গত লার্ভা মুখে পড়ে চর্মরোগের কারণ হতে পারে।
অটো ইমিউনিটি: শরীরে অটো ইমিউনিটি বেড়ে গেলে তা নিজ থেকেই প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে ত্বক লাল হয়ে ফুলে উঠতে পারে।
পরিবেশগত প্রভাব: আবহাওয়া, বাতাসের গরম ভাব এবং ধুলোবালিও এই সমস্যার কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত শুষ্ক আবহাওয়ায়ও রোসাসিয়া দেখা দিতে পারে।
এই সমস্যার প্রতিকার কী?
১. চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি ত্বকে এই ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তবে দ্রুত একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
২. সানস্ক্রিন ব্যবহার: সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে ত্বককে বাঁচাতে নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি।
৩. সঠিক ক্লিনজার: পিএইচ ব্যালেন্সযুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করলে ত্বক সুস্থ থাকে।
৪. আজালেইক অ্যাসিড: চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আজালেইক অ্যাসিডযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করলে ত্বকের সমস্যা দূর হতে পারে। তবে এর পরিমাণ সঠিকভাবে ব্যবহার করা জরুরি।
যেসব কাজ করা উচিত নয়:
অতিরিক্ত ঝাল খাবার ও গরম পানীয় এড়িয়ে চলুন।
সূর্যের প্রখর তাপ থেকে ত্বককে বাঁচিয়ে রাখুন।
মদ্যপান পুরোপুরি বন্ধ করে দিন।
অতিরিক্ত ব্যায়াম করবেন না, কারণ এতে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
হেয়ার স্প্রে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন, কারণ এতে থাকা রাসায়নিক ত্বকে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।
এই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলো মেনে চললে রোসাসিয়া থেকে নিজেকে বাঁচানো সম্ভব।