স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নানা ধরনের মতবাদ থাকলেও একটি বিষয়ে পুষ্টিবিদরা একমত – তা হলো ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলা। এই ক্ষতিকর ফ্যাট আমাদের শরীরের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। কিন্তু কেন ট্রান্স ফ্যাট এত বিপজ্জনক এবং কোন কোন খাবার থেকে এটি আসে, তা জানা খুবই জরুরি।
ট্রান্স ফ্যাট কী?
ট্রান্স ফ্যাট বা ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড সাধারণত প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। এটি মূলত হাইড্রোজেনেটেড তেলে থাকে, যা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সস্তায় স্নেহ পদার্থের জোগান দিতে তৈরি হয়েছিল। এই ফ্যাটের হাইড্রোকার্বন চেনের ডাবল বন্ড শরীরের পক্ষে ভাঙা সম্ভব হয় না, ফলে তা রক্তে জমা হয়। এই ফ্যাট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কমিয়ে দেয়। এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ে।
কোন কোন খাবারে থাকে ট্রান্স ফ্যাট?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে পাওয়া যায় এমন ডুবো তেলে ভাজা খাবারেই ট্রান্স ফ্যাট সবচেয়ে বেশি থাকে। পুরানো এবং বারবার ব্যবহার করা হাইড্রোজেনেটেড তেলে ভাজা আলুর চিপস, তেলেভাজা, শিঙাড়া, জিলিপি, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার—এসব খাবারেই ট্রান্স ফ্যাট থাকে। তাই এসব খাবার বাড়িতে তৈরি করে নারকেল, তিল বা অলিভের মতো প্রাকৃতিক তেলে ভাজা ভালো।
এছাড়াও, মার্জারিন, বিস্কিট, ক্র্যাকার, কেক মিক্স এবং আইসিং-এ ট্রান্স ফ্যাট থাকে। মার্জারিনের বদলে পরিমিত মাত্রায় মাখন বা ঘি খাওয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। এমনকি পাই ক্রাস্ট, প্যাটিজ়ের মোড়ক এবং কিছু ডেয়ারি-ফ্রি দুধ ও ক্রিমেও হাইড্রোজেনেটেড ফ্যাট থাকে। যাদের দুধে অ্যালার্জি আছে, তারা আমন্ড বা কাজু থেকে তৈরি দুধ ব্যবহার করতে পারেন।
প্রাকৃতিক ফ্যাট কেন প্রয়োজন?
শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর ফ্যাটও জরুরি। আমন্ড, কাজু, পেস্তা, চিনেবাদামের মতো বাদাম, নারকেল এবং তিলের মতো কোল্ড প্রেসড তেল খাদ্যতালিকায় রাখা ভালো। এছাড়াও কুমড়ো, চিয়া বা সূর্যমুখীর বীজে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট থাকে। পরিমিত পরিমাণে ঘি, মাখন, চিজ এবং ডার্ক চকোলেটও খাওয়া যেতে পারে।
তবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ঠিক কতটা ফ্যাট রাখা উচিত, সে বিষয়ে একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ সঠিক পরিমাণ না জেনে ফ্যাট গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য ট্রান্স ফ্যাটকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলা এবং প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যকর ফ্যাটকে অগ্রাধিকার দেওয়া আবশ্যক।