টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি: যারা সুগারের ওঠানামায় ভুগছেন, তাদের জন্য সতর্কবার্তা!

ডায়াবেটিসের রোগীদের বরাবরই হার্টের রোগের ঝুঁকি বেশি। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত যাদের ব্লাড সুগার অসম্ভব পরিমাণে ওঠানামা করে, তাদের হৃদরোগের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। নতুন এই রিপোর্টটি সামনে এসেছে ‘ডায়াবেটিস, ওবেসিটি অ্যান্ড মেটাবলিজম’ (Diabetes, Obesity & Metabolism) নামের জার্নালে প্রকাশ হওয়ার পর। প্রায় ২৯ হাজার টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর উপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে, যারা অন্তত দুই বছর ধরে এই রোগে ভুগছেন।

গবেষণায় উঠে এসেছে যে, যারা অসম্ভব পরিমাণে ব্লাড সুগার ওঠানামায় ভুগছেন, তারা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে একেবারেই মার্জিন লাইনে দাঁড়িয়ে। তাই তাদের অনেক অনেক বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

নীরব ঘাতক: হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি
ডায়াবেটিস বাড়াচ্ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি। আর ভয়াবহ এই হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা ক্রমশই বাড়ছে। এজন্য সঠিক সময়ে পরীক্ষা করানোটা খুব জরুরি। কারণ, অনেক সময় এই হার্ট অ্যাটাক এতটাই যন্ত্রণাহীন হয় যে, প্রথম কয়েক ঘণ্টা রোগী নিজেই বুঝতে পারেন না যে তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, যাকে সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাক বলা হয়। যদি কোনো ডায়াবেটিক রোগী শ্বাসকষ্ট, বা বুকে ব্যথার মতো সমস্যায় ভোগেন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে। এটি হার্ট অ্যাটাকের একটি গুরুতর লক্ষণ হতে পারে।

ডায়াবেটিসের ব্যাপক প্রভাব ও প্রতিরোধ:
ডায়াবেটিসের ফলে চোখ, কিডনি, হার্ট, ব্রেন, নার্ভের যে মারাত্মক ক্ষতি হয়, সে সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলাই লক্ষ্য। যত তাড়াতাড়ি ডায়াবেটিস ধরা পড়বে, তত বেশি ক্ষতির ঝুঁকি কমবে।

কাশি বা শ্বাসকষ্টকে সাধারণ নিউমোনিয়া ভেবে অবহেলা করবেন না। ডায়াবেটিস থাকলে এই সমস্যাই হয়ে উঠতে পারে ভয়াবহ। তাই ফ্লু ও নিউমোককাল ভ্যাক্সিন সংক্রমণ রোখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে পারে, তাই এই ভ্যাকসিনগুলো তাদের জটিলতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

এর পাশাপাশি নিয়মিত রক্তে শর্করার পরিমাণ পরীক্ষা করে নেওয়া এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। তাই ডায়াবেটিস মোকাবেলায় ব্যালেন্সড ডায়েটের গুরুত্ব দিতে হবে।

শীতকালে বাড়তি সতর্কতা:
যাদের হৃদযন্ত্র দুর্বল, শীতের সময় তাদের অতিরিক্ত যত্নবান হতে হবে। তাদের নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। ভোরের ঠান্ডা বা কুয়াশা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নিজেদের রুটিনে অল্পবিস্তর পরিবর্তন আনতে হবে। হার্ট ভালো রাখতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন ফল ও সবজি খেতে হবে। জল ও লবণের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ ও জল খেলে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যাদের হৃদযন্ত্র দুর্বল।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে হার্টের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা এই রোগের জটিলতা এড়ানোর একমাত্র উপায়।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy