বর্তমান সময়ে চিকিৎসকরা সাধারণত তেল এবং রিফাইন্ড অয়েল থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। তবে, দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে খাঁটি দেশি ঘি অত্যন্ত পুষ্টিগুণে ভরপুর। এটি সাবধানে এবং সঠিকভাবে গ্রহণ করলে আপনার হজম, বিপাক এবং এমনকি হৃদরোগের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী হতে পারে। তবে কেন ঘি খাওয়া উচিত, সে বিষয়ে চিকিৎসকদের মতামত এবং বিজ্ঞানসম্মত কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
ঘি কী এবং কেন এটি স্বাস্থ্যকর?
ঘি একটি বিশেষ ধরনের মাখন, যা ধীরে ধীরে গরম করে জল এবং দুধের কঠিন পদার্থ আলাদা করে তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় যে খাঁটি সোনালি চর্বি থাকে, তা হল দেশি ঘি। প্রক্রিয়াজাত তেলের বিপরীতে, ঘিতে শর্ট-চেইন এবং মিডিয়াম-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা আপনাকে তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করে এবং বিপাকীয় ক্রিয়াকলাপগুলিকে সমর্থন করে।
দেশি ঘি প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, চর্বি-দ্রবণীয় ভিটামিন (এ, ডি, ই, এবং কে) এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এর পুষ্টিগুণ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ঘি এর উপকারিতা
১. পাকস্থলীর কোষ পুষ্ট করে: ঘি পাকস্থলীর কোষগুলোকে পুষ্ট করে এবং পাচনতন্ত্রের প্রদাহ কমায়। এটি একটি সুস্থ অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে সমর্থন করে, যা সুস্থ হজম প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. হজমশক্তি উন্নত করে: ঘি হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে যারা অ্যাসিডিটি, পেট ফাঁপা বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) এর মতো রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি উপকারী।
৩. পুষ্টি শোষণের ক্ষমতা বৃদ্ধি: ঘি চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিনের শোষণ বৃদ্ধি করে, যার ফলে শরীর খাবার থেকে পুষ্টি উপাদানগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে।
৪. পাচক এনজাইম এবং পিত্ত উৎপাদন: খাবারের সঙ্গে অল্প পরিমাণে ঘি খেলে পাচক এনজাইম এবং পিত্ত উৎপন্ন হয়, যা হজমশক্তি আরও উন্নত করে।
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য: দেশি ঘি খেলে পেট ভরে যাওয়ার অনুভূতি বাড়ে, যা ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। ফলে এটি নিয়মিত খেলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করতে পারে।
কতটা ঘি খাওয়া উচিত?
পুষ্টিবিদদের মতে, দৈনিক ক্যালোরির ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ ফ্যাট থেকে আসা উচিত। তবে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট থেকে তা যদি ১০ শতাংশের কম থাকে, তাহলে তা শরীরের জন্য উপকারী। ঘিয়ের মধ্যে ১৫ গ্রাম ফ্যাটের মধ্যে ৯ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। সেক্ষেত্রে, দিনে দুই চামচ দেশি ঘি খাওয়া যেতে পারে। ঘিয়ের মধ্যে যে ধরনের ফ্যাট রয়েছে, তা হার্টের জন্য ভাল, এবং এটি ডায়াবেটিস ও ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে।
ঘি সম্পর্কে সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেন, বাজারে বিক্রি হওয়া অনেক ঘির মধ্যে কৃত্রিম স্বাদ এবং বনস্পতি মিশিয়ে বিক্রি করা হয়। ফলে খাঁটি দেশি ঘি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। যাতে শরীরে কোনো অপ্রত্যাশিত ক্ষতি না হয়, সেক্ষেত্রে ঘি বাড়িতে তৈরি করাই উত্তম।
উপসংহার
প্রাকৃতিক এবং খাঁটি দেশি ঘি আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে, এর সঠিক পরিমাণ এবং কৌশল জানতে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিকভাবে এবং নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে ঘি খেলে এটি আপনার হজম, বিপাক এবং হৃদরোগের স্বাস্থ্যেও উপকারে আসবে।