ক্যান্সার প্রতিরোধে আপনার হাতেই চাবিকাঠি, এই ১০টি অভ্যাস বদলে দেবে আপনার জীবন!

জানেন কি, প্রায় ৭০ শতাংশ ক্যান্সারই এড়িয়ে চলা সম্ভব? এই মারণব্যাধি মূলত আমাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যান্সার প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হলো সক্রিয় জীবনযাপন এবং তামাকজাত পণ্য সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা। এর পাশাপাশি, একটি সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন, তাদের স্তন ক্যান্সার বা অন্যান্য ক্যান্সারে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৪৫% কম থাকে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবেই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব:

১. প্রতিদিন পর্যাপ্ত রোদ পোহান:
যাদের দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে, তারা মলাশয় বা স্তন ক্যান্সার সহ নানা ধরনের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারেন। এমনকি, ত্বকের মারাত্মক ক্যান্সার মেলানোমা থেকেও মুক্তির সম্ভাবনা বাড়ে। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি-এর প্রাকৃতিক উৎস।

২. প্রতিদিন একটি করে কমলা খান:
কমলায় থাকা উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী এইচ. পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এই ধরনের লোকদের দেহে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদানের আক্রমণও খুব কম হয়।

৩. খাদ্যতালিকায় ব্রোকোলি যোগ করুন:
প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ব্রোকোলি খেলে ডিম্বাশয়, পাকস্থলী, ফুসফুস, মূত্রাশয় এবং মলাশয় ও পায়ুপথের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে। এতে রয়েছে সালফোর‌্যাফেন নামের একটি উপাদান, যা স্তন ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী।

৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া নারীদের ২০ শতাংশ এবং পুরুষদের ১৪ শতাংশের মৃত্যুর কারণ অতিরিক্ত ওজন। প্রাকৃতিকভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধের অন্যতম সেরা উপায় হলো শরীরের আদর্শ ওজন বজায় রাখা।

৫. প্রতিদিন কলা খান:
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে অন্তত ৪-৬টি কলা খান, তাদের কিডনি ক্যান্সারের ঝুঁকি অন্তত ৫৪% কমে যায়। কলা একটি সহজলভ্য এবং পুষ্টিকর ফল, যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে।

৬. সামান্য ব্যথাতেও সতর্ক হন:
যদি প্রায়ই গ্যাসের কারণে পেট ফোলা, পেলভিক পেইন (শ্রোণীচক্রের ব্যথা) এবং জরুরি ভিত্তিতে প্রস্রাব করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ার মতো সমস্যা হয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অনেকেই এই লক্ষণগুলোকে অগ্রাহ্য করেন, কিন্তু পরে দেখা যায় যে তারা কোনো মারাত্মক ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সময়মতো সতর্ক হওয়া জীবন বাঁচাতে পারে।

৭. প্রতিদিন ক্যালসিয়াম গ্রহণ করুন:
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা টানা চার বছর ধরে প্রতিদিন ক্যালসিয়াম গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে নতুন ক্যান্সারপ্রবণ কোলোন পলিপ হওয়ার ঝুঁকি ৩৬% কমে গেছে। ক্যালসিয়াম শুধুমাত্র হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যই নয়, ক্যান্সার প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ।

৮. প্রতিদিন ৩০ মিনিট ঘাম ঝরান:
সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে শারীরিক তৎপরতায় শরীরে অ্যান্ড্রোজেন এবং ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসরণে ভারসাম্য বজায় থাকে। এই দুটি হরমোন নারীদেরকে ইস্ট্রোজেন-নির্ভর ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দেয়। নিয়মিত শরীরচর্চা সামগ্রিক স্বাস্থ্যকেও উন্নত করে।

৯. ধূমপান সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করুন:
ধূমপান শুধু ফুসফুস ক্যান্সারই নয়, বরং মুখের ক্যান্সার, শ্বাসনালী এবং খাদ্যনালীর ক্যান্সারেরও প্রধান কারণ। এছাড়াও, ধূমপান পাকস্থলী, লিভার, প্রোস্টেট, মলাশয় ও পায়ুপথ, সার্ভিক্যাল এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিও মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে দেয়। সুস্থ জীবন চাইলে ধূমপান বর্জন অপরিহার্য।

১০. সাদা পাউরুটি খাওয়া বাদ দিন:
উচ্চ গ্লাইসেমিক উপাদান আছে এমন খাবার, যেমন সাদা পাউরুটি, খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় এবং মলাশয় ও পায়ুপথের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। পরিমিত এবং স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা জরুরি।

এই ১০টি অভ্যাস আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করে আপনি ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবেন। সুস্থ জীবন আপনার হাতেই।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy