কিডনি স্টোন, কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো বৃক্ক বা কিডনি। শরীরের সার্বিক সুস্থতা এবং রক্ত পরিশোধন প্রক্রিয়ার জন্য কিডনির যত্ন নেওয়া অপরিহার্য। কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে নানা রকম বর্জ্য পদার্থ পরিশোধিত হয়। ইদানীংকালে কিডনির নানা সমস্যার মধ্যে কিডনিতে পাথর হওয়া বা কিডনি স্টোন একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশে কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

কিডনি স্টোনের প্রাথমিক লক্ষণ:
কিডনি স্টোনের লক্ষণগুলি পাথরের অবস্থান, আকার ও আকৃতির উপর নির্ভর করে। কিছু সাধারণ লক্ষণ নিচে দেওয়া হলো:

রক্তবর্ণের প্রস্রাব: প্রস্রাবের রঙ লালচে বা বাদামী হলে তা কিডনি স্টোনের একটি গুরুতর লক্ষণ হতে পারে।

বমি বমি ভাব বা বমি: কিডনি স্টোনের কারণে তীব্র ব্যথা অনুভূত হলে গা বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।

কোমরের পিছন দিকে তীব্র ব্যথা: এটি কিডনি স্টোনের সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ। ব্যথা সাধারণত কোমরের পিছন দিক থেকে শুরু হয়ে ক্রমশ তলপেট বা কুঁচকিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ব্যথা তীব্র হলেও সাধারণত খুব বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয় না, তবে এটি বারবার ফিরে আসতে পারে।

কিডনিতে পাথর জমার কারণ:
কিডনিতে পাথর জমার প্রকৃত কারণ এখনও সম্পূর্ণভাবে চিহ্নিত করা যায়নি। তবে চিকিৎসকরা কিছু বিষয়কে কিডনিতে পাথর তৈরির প্রধান কারণ বলে মনে করেন:

পর্যাপ্ত পানির অভাব: শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না থাকলে প্রস্রাব ঘন হয়ে যায় এবং খনিজ পদার্থগুলি জমাট বেঁধে পাথরের সৃষ্টি করতে পারে।

বারবার কিডনিতে সংক্রমণ: কিডনি বা মূত্রনালীতে বারবার সংক্রমণ (UTI) হলে এবং তার জন্য যথাযথ চিকিৎসা না করালে পাথর জমার ঝুঁকি বাড়ে।

মাত্রাতিরিক্ত দুগ্ধজাত খাবার: অতিরিক্ত পরিমাণে পনির, দুধ বা অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথরের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

শরীরে ক্যালসিয়ামের আধিক্য: কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক অবস্থার কারণে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে তা কিডনিতে পাথর সৃষ্টি করতে পারে।

প্রতিরোধে সতর্কতা:
কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি এড়াতে নিম্নলিখিত সতর্কতাগুলি অবলম্বন করা জরুরি:

প্রচুর পরিমাণে জল পান: দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা কিডনিকে সুস্থ রাখতে এবং পাথর জমা রোধ করতে সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

প্রস্রাব চেপে না রাখা: প্রস্রাবের বেগ আসলে দীর্ঘক্ষণ তা চেপে রাখবেন না। চেষ্টা করবেন সঙ্গে সঙ্গে প্রস্রাব করার। এটি মূত্রনালী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যেমন লেবু, কমলালেবু, পেয়ারা ইত্যাদি গ্রহণ করুন। ভিটামিন সি মূত্রনালীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

দুগ্ধজাত খাবার নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত মাত্রায় দুগ্ধজাত খাবার না খাওয়াই ভালো, বিশেষ করে যাদের ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথর জমার প্রবণতা আছে।

সংক্রমণের দ্রুত চিকিৎসা: বারবার ইউরিন ইনফেকশন বা কিডনিতে সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং যথাযথ চিকিৎসা শুরু করুন। সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হলে কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি বাড়ে।

কিডনির সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং পাথর জমার ঝুঁকি এড়াতে জীবনযাত্রায় এই পরিবর্তনগুলি আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy