আজকাল একটি অন্যতম সমস্যা হলো কিডনির রোগ। নিজের অজান্তেই শরীরের ক্ষতি করতে পারে এই রোগ। হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস বা বংশগত রোগের প্রবণতা থাকলেও কিডনিতে একাধিক সমস্যা দেখা যায়। এতে করে মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে কিডনি সুস্থ রাখতে কয়েকটি সাধারণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
আপনার মূল্যবান কিডনিকে সুরক্ষিত রাখতে এবং এর কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে নিচে উল্লিখিত অভ্যাসগুলো মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি:
১. ওষুধ ও পেইন কিলার থেকে দূরে থাকুন
অতিরিক্ত মাত্রায় পেইন কিলার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এতে কিডনির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কোনো বিকল্প চিকিৎসা নেওয়া যেতে পারে, যা কিডনির জন্য নিরাপদ।
২. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত ব্লাড সুগার থাকলে অবশ্যই তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ কিডনির ওপর এটির ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, এমনকি কিডনি ফেইলিওরও হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের সচেতন থাকতে হবে এবং ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত পরীক্ষা ও খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে।
৩. পর্যাপ্ত জল পান করুন (হাইড্রেশন)
এর কোনো বিকল্প নেই। তাই কিডনি ভালো রাখতে শরীরের জন্য পর্যাপ্ত জল একান্ত প্রয়োজন। জলের পাশাপাশি জুস, স্যুপের মতো লিকুইড খাবার খাওয়ার প্রতি জোর দিতে হবে। তবে অবশ্যই সোডাজাতীয় পানীয় এড়িয়ে যেতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস জল পান করতে হবে। এতে কিডনি থেকে টক্সিন দূর হয় এবং পাথর সৃষ্টির ঝুঁকি কমে।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত মাত্রায় ওজন বাড়লে কিডনির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও জরুরি। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত শরীরচর্চা ও সুষম ডায়েটের ওপর নজর দিতে হবে।
৫. ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার
ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ এতে শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা কিডনিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি সাধন করে। এর জেরে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাও হতে পারে।
৬. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
রক্তচাপ তথা ব্লাড প্রেসার নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। নিয়মিত ব্লাড প্রেসার চেক করাতে হবে এবং তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হলে কিডনির ওপরও এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে এবং কিডনি ড্যামেজের ঝুঁকি বাড়ে।
৭. স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়াদাওয়া
কিডনি ভালো রাখতে খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে জোর দিতে হবে। কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। বাইরের খাবার, প্যাকেটজাত খাবার, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস পরিহার করতে হবে। এর পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সাইট্রিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। অর্থাৎ, লেবু, কমলালেবু, আঙুর, ব্লু-বেরি বা এ জাতীয় ফল খাওয়া যেতে পারে, যা কিডনির পাথর প্রতিরোধে সহায়ক।
৮. নিয়মিত শরীরচর্চা
নিয়মিত শরীরচর্চাও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। এর সাহায্যে দ্রুত টক্সিন বের হয়ে যায় শরীর থেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচবার শরীরচর্চা কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এ ক্ষেত্রে যোগব্যায়ামও অত্যন্ত উপকারী।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা (বডি চেক-আপ)
নিয়ম মেনে কিছুদিন পরপর পুরো বডি চেক-আপ করিয়ে নিতে হবে। এর জেরে নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন থাকা যাবে এবং কিডনির কোনো সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাবে। এ ক্ষেত্রে বছরে অন্তত দু-তিনবার চেক আপ করিয়ে নেওয়া ভালো।