আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো কিডনি। এটি দিনরাত নিরলসভাবে রক্ত থেকে ক্ষতিকর উপাদান ফিল্টার করে এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে সেগুলো দেহ থেকে বের করে দেয়। কিডনি নেফ্রন নামের লাখ লাখ ছোট কোষের সমন্বয়ে গঠিত, যা বিশুদ্ধ রক্ত পুনরায় দেহে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু পর্যাপ্ত জল পান না করলে কিডনিতে বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে পাথর তৈরি হতে পারে, যা মূত্রাশয়ে গিয়ে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে। যদিও বংশসূত্রে বা গেঁটেবাত থেকেও কিডনিতে পাথর হতে পারে।
কিডনিতে পাথর হলে তা দ্রুত অপসারণ জরুরি। পাথরের আকার ছোট হলে তা প্রস্রাবের সঙ্গে এমনিতেই বের হয়ে আসে। কিন্তু অনেক সময় পাথর বড় হলে অপারেশনের প্রয়োজন পড়ে, যা ঝুঁকিপূর্ণ এবং সুস্থ হতে লম্বা সময় লাগে। আর এ কারণেই অনেকে প্রাকৃতিকভাবেই কিডনির পাথর অপসারণের চেষ্টা করেন। আসলে মানুষের সব ধরনের রোগেরই প্রাকৃতিক চিকিৎসা আছে। এতটাই শক্তিশালী প্রকৃতি।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কিডনির পাথর তাড়ানোর ১২টি প্রাকৃতিক পদ্ধতি:
১. প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন
কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রধান কারণ যেহেতু জলশূন্যতা, সেহেতু প্রচুর পরিমাণে জল পান করলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। জল কিডনিতে টক্সিন জমতে দেয় না, পাথরের জন্য প্রাকৃতিকভাবে বের হওয়ার সুযোগ করে দেয় এবং নতুন পাথর হওয়াও ঠেকায়।
২. আপেল সিডার ভিনেগার
এতে আছে সাইট্রিক অ্যাসিড, যা কিডনির পাথর গলিয়ে ফেলতে সক্ষম। এছাড়া এর ক্ষারীয় উপাদান কিডনি থেকে বিষাক্ত বর্জ্য বের করে দিয়ে কিডনিকে পরিষ্কার রাখতে সহায়ক। এক গ্লাস হালকা গরম জলে ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে প্রতিদিন পান করুন।
৩. বেকিং সোডা
এতে থাকা অ্যাসিড কিডনির পাথরে থাকা অ্যাসিড নিষ্ক্রিয় করে দেয় এবং পাথরের আকার ছোট করে আনে। এছাড়া কিডনি এবং মূত্রনালির প্রদাহ কমায় বেকিং সোডা। এক গ্লাস জলের সঙ্গে আধা টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে প্রতিদিন পান করুন।
৪. তুলসী পাতা
এটি টক্সিন পরিষ্কারক এবং কিডনিতে ইউরিক অ্যাসিডের হার কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া এটি প্রাকৃতিক পেইনকিলার হিসেবেও কাজ করে।
৫. লেবুর রস এবং অলিভ অয়েল
লেবুর অ্যাসিডময় উপাদান কিডনির পাথরের আকার কমাতে সহায়তা করে, আর অলিভ অয়েল কিডনির পাথর সহজে বের করে আনতে সহায়ক। লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনির স্বাস্থ্য ভালো করে এবং পুনরায় পাথর হওয়া প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন দুই চা চামচ লেবুর রসের সঙ্গে ২ চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে পান করুন।
৬. তরমুজের বীজ
সম্প্রতি তরমুজের বীজের চা কিডনির পাথর দূর করার ওষুধ হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। তরমুজের বীজ এর রেচক গুণের জন্য বিখ্যাত। এটি শক্তিশালী ক্লিনজার এবং কিডনি থেকে বর্জ্য ও অন্যান্য টক্সিক উপাদান বের করে দিতে সহায়ক। এর ফলে কিডনির ফাংশন উন্নত হয় এবং সার্বিকভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা স্বাস্থ্যবান কিডনির জন্য জরুরি। এক লিটার জল সেদ্ধ করে তাতে এক মুঠো তরমুজের বীজ বেটে মেশান। এরপর আধা ঘণ্টা ধরে রান্না করে ঠাণ্ডা করে পান করুন।
৭. বেদানার জুস
এর কষাটে উপাদান কিডনির পাথর দূর করতে সহায়ক। এটি কিডনির ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমায় এবং পাথর ভাঙতে সহায়ক। এরপর পাথরগুলো সহজেই প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে আসে। বেদানার জুস আমাদের দেহের আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সহায়ক। এক কাপ বেদানার বীজ দুই কাপ জলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে পিষে জুস বানিয়ে পান করুন।
৮. সেলারি
এই শাকটি খেলে কিডনি থেকে বর্জ্য অপসারণের গতি বাড়ে। এছাড়া কিডনির ক্ষারের হারে ভারসাম্যও ফিরিয়ে আনে এটি। এটি প্রস্রাবের উৎপাদনেও উৎসাহ যোগায়, যা কিডনি থেকে পাথর অপসারণে সহায়ক। এক পাত্র জলে এক আঁটি সেলারি শাক সেদ্ধ করে প্রতিদিন সেবন করুন।
৯. কলার ডাঁটা
নানা প্রাচীন গ্রন্থেও কলা গাছের ভেতরের সাদা ডাঁটার কিডনির পাথর অপসারণের গুণ বর্ণিত আছে। এটি উচ্চমাত্রায় মূত্রবর্ধক এবং কিডনির পাথর ভাঙতে সহায়ক। প্রতিদিন যদি কলার ডাঁটার জুস খাওয়া যায়, তাহলে কিডনির পাথর অপসারিত হবে। আধা কাপ কলার ডাঁটার কুচি নিন এবং দুধের সঙ্গে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে এর সঙ্গে এক চিমটি দারুচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন।
১০. কর্ণ হেয়ার (ভুট্টার তুষ)
এর আরেকটি নাম কর্ন সিল্ক। ভুট্টার তুষ থেকে পাওয়া যায় এটি। এটি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে দেয় না। এটি পেইনকিলার হিসেবে কাজ করে এবং কিডনির প্রদাহও কমায়। এককাপ জলে এক মুঠো কর্ন হেয়ার সেদ্ধ করার পর রসটুকু ছেঁকে নিয়ে পান করুন।
১১. কিডনি বিন (রাজমা)
এতে আছে উচ্চমাত্রার আঁশ, যা যেকোনো ধরনের কিডনির রোগ উপশমে সহায়ক। একটি সস প্যানে কিডনি বিন নিয়ে হালকা আঁচে ২-৩ ঘণ্টা ধরে সেদ্ধ করুন। এরপর জলটুকু ছেঁকে নিয়ে পান করুন। প্রতিদিন কয়েকবার এভাবে কিডনি বিনের রস পান করুন।
১২. মুলার জুস
মুলার রসে থাকা খনিজ উপাদান কিডনির পাথর ভাঙতে এবং সহজে বের করে দিতে সহায়ক। আধা কাপ মুলার কুচি নিয়ে জলে আধা ঘণ্টা ধরে সেদ্ধ করুন। এরপর রসটুকু ছেঁকে নিয়ে পান করুন। পাথর বের না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন পান করুন।