শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকা কেবল পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের কারণ নয়, এটি তাদের সাধারণ স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়—এমনই দাবি করেছেন গবেষকরা। সম্প্রতি একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, কম শুক্রাণু সংখ্যা পুরুষদের শরীরে বিপাকীয় পরিবর্তন, হৃদরোগের ঝুঁকি, এবং হাড়ের ঘনত্বের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ইতালির ব্রেসিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আলবার্তো ফেরলিন বলেন, “আমাদের গবেষণায় স্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছে যে শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকা বিপাকীয় পরিবর্তন, হৃদরোগের ঝুঁকি এবং হাড়ের ভর কম থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত।”
এখন পর্যন্ত, শুক্রাণুর সংখ্যা কম হওয়ার সঙ্গে পুরুষদের স্বাস্থ্যের সম্পর্ক অনেকের কাছে অজানা ছিল। পাডোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফেরলিন আরও জানান, “পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব কেবল প্রজনন সমস্যা নয়, এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সংকেত। আমাদের গবেষণায় এটি প্রমাণিত হয়েছে যে কম শুক্রাণু সংখ্যা পুরুষদের শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।”
এই গবেষণাটি ENDO 2018: The Endocrine Society’s 100th Annual Meeting and Expo-তে উপস্থাপিত হয়েছিল। গবেষকরা বন্ধ্যাত্ব দম্পতিদের ৫,১৭৭ জন পুরুষের উপর গবেষণা করেছেন, যেখানে তাদের শুক্রাণু বিশ্লেষণ এবং প্রজনন হরমোনের পরিমাপ করা হয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক পুরুষের শুক্রাণু সংখ্যা কম ছিল এবং এই পুরুষদের মধ্যে স্বাভাবিক শুক্রাণু সংখ্যার তুলনায় বেশি চর্বি, উচ্চ রক্তচাপ, খারাপ কোলেস্টেরল (LDL), ট্রাইগ্লিসারাইডের উচ্চ মাত্রা, এবং কম ভালো কোলেস্টেরল (HDL) ছিল।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, কম শুক্রাণু সংখ্যাযুক্ত পুরুষদের মেটাবলিক সিনড্রোমের প্রবণতা বেশি ছিল, যা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া, ইনসুলিন প্রতিরোধের পরিমাপও বেশি ছিল, যা ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
গবেষকরা আরো নিশ্চিত করেছেন যে, কম শুক্রাণু সংখ্যাযুক্ত পুরুষদের হাইপোগোনাডিজম বা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম হওয়ার ঝুঁকি ১২ গুণ বেড়ে যায়। টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি পুরুষদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, কম টেস্টোস্টেরনযুক্ত পুরুষদের হাড়ের ঘনত্ব স্ক্যানে দেখা গেছে যে তাদের অর্ধেকেরই অস্টিওপোরোসিস বা কম হাড়ের ভর ছিল, যা অস্টিওপোরোসিসের সম্ভাব্য পূর্বসূরি হতে পারে।
এই গবেষণার ফলাফল পুরুষদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ক্ষেত্রে নতুন দিক উন্মোচন করেছে এবং এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে, পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কম হওয়া কেবল প্রজনন সমস্যা নয়, বরং এটি তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যঝুঁকির একটি চিহ্ন।