প্রাত্যহিক জীবনে আমরা প্রায় সকলেই কোনো না কোনো সময়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথায় আক্রান্ত হই। তবে মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন ধরনের ব্যথা বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক সঙ্কেত হতে পারে। তাই হালকা ব্যথা হলেও তাকে অবহেলা করা উচিত নয়। আজ আমরা এমন আটটি ব্যথা সম্পর্কে জানব, যেগুলো দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন:
১) আকস্মিক তীব্র মাথাব্যথা: যদি হঠাৎ করে তীব্র মাথাব্যথা শুরু হয়, তবে এটি ব্রেইন অ্যানুরিজমের লক্ষণ হতে পারে। এই ব্যথা ক্রমশ বাড়লে মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে যেতে পারে, যার ফলে স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
২) ঠান্ডা খাবারে দাঁতে ব্যথা: ঠান্ডা কিছু খেলে দাঁতে ব্যথা অনুভব করলে বুঝবেন আপনার দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দাঁতে ব্যথা এবং শিরশিরানি অনুভূত হলেই দ্রুত দন্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
৩) হাত ও কবজিতে ছড়িয়ে পড়া ব্যথা বা অসাড়তা: যদি আঙুল, হাত, হাতের তালু এবং কবজি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়া ব্যথা অথবা অসাড় অনুভূতি টের পান, তাহলে আপনি কার্পেল টানেল সিনড্রোমে ভুগতে পারেন। দ্রুত চিকিৎসা না করালে হাতের পেশি শুকিয়ে যেতে পারে এবং হাত স্থায়ীভাবে অবশ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৪) বুকে ব্যথা: বুকে ব্যথা হার্ট অ্যাটাকের একটি অন্যতম প্রধান লক্ষণ। এর অর্থ হলো আপনার রক্তে অক্সিজেন পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে। বুকের এই ব্যথা চাপা অনুভূতি থেকে কাঁধ এবং গলা পর্যন্তও ছড়িয়ে যেতে পারে। এই ধরনের ব্যথাকে কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়।
৫) পিঠের মাঝখানে ব্যথার সাথে জ্বর ও সর্দি: যদি পিঠের মাঝামাঝি অংশে ব্যথার সাথে জ্বর এবং সর্দি থাকে, তবে এটি কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। চিকিৎসা না করালে এই সংক্রমণ থেকে কিডনিতে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হতে পারে।
৬) কোমর থেকে পায়ের দিকে ছড়ানো ব্যথা: কোমর থেকে শুরু হয়ে পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়া ব্যথাকে স্কিয়াটিকা বলা হয়। পায়ের স্কিয়াটিক টিস্যুতে চাপের কারণে এই ব্যথা হয়। তবে এই ব্যথার সাথে যদি প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দেয়, তবে এটি কডা ইকুইনা সিনড্রোম নামক একটি বিরল রোগের লক্ষণ হতে পারে, যা থেকে স্থায়ীভাবে প্যারালাইসিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৭) পেটের ডানদিকে তীব্র ব্যথা, জ্বর ও বমি বমি ভাব: শিরদাঁড়ার নিচে ডানদিকে তীব্র ব্যথা এবং সেইসঙ্গে জ্বর, সর্দি অথবা বমি বমি ভাব অনুভূত হলে ধরে নিতে পারেন আপনার অ্যাপেনডিসাইটিস হয়েছে। দেরি না করে দ্রুত অপারেশনের জন্য যান, নতুবা অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গিয়ে জীবন বিপন্ন হতে পারে।
৮) পায়ে খিল ধরা ও প্রদাহ: পায়ে খিল ধরা স্বাভাবিক ঘটনা হলেও, এর সাথে যদি প্রদাহ এবং ফোলাভাব যুক্ত হয়, তবে আপনার শরীরে ক্ষতিকারক রক্তপিণ্ড থাকতে পারে। এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে কথা বলে আলট্রাসনোগ্রাম করানো উচিত।
শরীরের এই আট ধরনের ব্যথাকে কখনোই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। তাই কোনো অস্বাভাবিক ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।