আমরা সাধারণত যেসব খাবার কিংবা পানীয় সেবন করি, তা থেকে উৎপন্ন প্রাকৃতিক বর্জ্য পদার্থের মধ্যে অন্যতম হল ইউরিক অ্যাসিড। বর্তমানে এটি কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বৃদ্ধি বা হাইপারইউরিসেমিয়া থেকে নানা জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে কিডনিতে পাথর, ক্রনিক কিডনি ডিজিস (সিকেডি) এবং কিডনি বিকল হওয়ার মতো মারাত্মক অবস্থা অন্তর্ভুক্ত।
গবেষণার চাঞ্চল্যকর তথ্য
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অতিরিক্ত হলে কিডনির কার্যকারিতার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এএম মেডিক্যাল সেন্টারের রিউম্যাটোলজিস্ট ডা. সুশোভন মণ্ডলের মতে, ‘‘অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টাল তৈরি করতে পারে, যার ফলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। এমনকি প্রদাহ, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং এন্ডোথেলিয়াল ডিসফাংশনের মাধ্যমে ক্রনিক কিডনি রোগের সম্ভাবনাও থাকে।’’ তিনি আরও জানান, ‘‘এটি কিডনির অটোরেগুলেশন ব্যাহত করতে পারে, উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে এবং দীর্ঘ মেয়াদে কিডনির স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে।’’
খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার প্রভাব
বর্তমানে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং মেটাবলিক সিনড্রোমের বৃদ্ধি ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। এএম মেডিক্যাল সেন্টারের নেফ্রোলজিস্ট ডা. উত্তয়ন চক্রবর্তী বলেন, “রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি হলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। পাশাপাশি, এটি হাইপারটেনশন এবং কার্ডিওভাস্কুলার রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইপারইউরিসেমিয়ার অন্যতম কারণ হলো উচ্চমাত্রায় প্রসেসড ফুড, জাঙ্ক ফুড এবং চিনি জাতীয় পানীয়ের গ্রহণ। এই ধরনের খাবার কিডনি এবং হৃদযন্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
প্রতিরোধ ও করণীয়
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে কিডনি রোগের জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডা. উত্তয়ন চক্রবর্তী পরামর্শ দেন যে, যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ওবেসিটির সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের অবশ্যই ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। এই সমস্যার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ হলো:
পর্যাপ্ত পানি পান করা
জাঙ্ক ফুড, প্রসেসড ফুড এবং চিনিযুক্ত পানীয় পরিহার করা
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা
প্রয়োজনে ইউরিক অ্যাসিড লোয়ারিং থেরাপি গ্রহণ করা
সতর্কতা ও ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি
হাইপারইউরিসেমিয়া সম্পর্কিত গবেষণা এখনও চলছে, তবে বর্তমান তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, কিডনি সুস্থ রাখতে হলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। তাই যাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন, তাঁদের এখনই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সঠিক জীবনযাত্রা অনুসরণ করলে কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব, যা ভবিষ্যতে সুস্থ জীবনযাপনে সহায়ক হবে।