মানুষের শরীরকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে হজম প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা যে খাবার গ্রহণ করি, তা সঠিকভাবে হজম হওয়া কেবল প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করাই নয়, বরং একটি দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যকর জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে। হজম প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ হলে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক ও কার্যকর রাখতে সঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। পুষ্টিবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন, কখনোই দীর্ঘক্ষণ পেট খালি রাখা উচিত নয়। বরং, প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা অন্তর অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। একবারে বেশি খাবার খেলে হজমের উপর চাপ পড়ে এবং শরীরে মেদ জমার সম্ভাবনাও বাড়ে।
অনেকের মধ্যেই এই ভুল ধারণা রয়েছে যে বারবার খেলে শরীরে মেদ জমে। তবে পুষ্টিবিদরা এই ধারণাকে সম্পূর্ণ ভুল বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, দিনে তিনবার ভারী খাবার গ্রহণের চেয়ে ছয়বার অল্প অল্প করে খাবার গ্রহণ করাই শরীরের জন্য সঠিক। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া সচল থাকে এবং শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে পারে না।
সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার দিনের তিনটি প্রধান আহার। এই সময়ের খাবার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই মধ্যবর্তী সময়ে হালকা খাবার গ্রহণও জরুরি। দীর্ঘক্ষণ পেট খালি থাকলে গ্যাস ও অম্বলের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। পুষ্টিবিদরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি প্রধান খাবারের মধ্যে অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টার বিরতি রাখা প্রয়োজন। এই সময়গুলোতে হালকা ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত।
উদাহরণস্বরূপ, প্রাতঃরাশে দুধ-কর্নফ্লেক্স বা ওট্স খেলে, সকালের মাঝামাঝি সময়ে (মিড মর্নিং) একটি ফল অথবা একমুঠো বাদাম খাওয়া যেতে পারে। একইভাবে, দুপুরের খাবারের পর সরাসরি রাতের খাবার না খেয়ে, বিকেলে হালকা টিফিন করা আবশ্যক। এই সময়ে ছাতু, বাদাম বা শুকনো ফল খাওয়া যেতে পারে। তবে ভাজাভুজি বা মুচমুচে স্ন্যাকস এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
শরীরের বিপাক হারের উপর নির্ভর করে কতক্ষণ পর পর খাবার গ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও, সকালে ঘুম থেকে ওঠা, দিনের বেলায় শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা এবং শরীরচর্চার অভ্যাসের মতো বিষয়গুলিও খাদ্য গ্রহণ এবং তার সময়ের উপর প্রভাব ফেলে। তবে, সার্বিকভাবে সময় মেনে খাবার গ্রহণ করা সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই, সঠিক হজম প্রক্রিয়া বজায় রাখতে এবং একটি রোগমুক্ত জীবন পেতে নিয়ম মেনে আহার গ্রহণের উপর জোর দেওয়া উচিত।