নীরব ঘাতক উচ্চ রক্তচাপ, বিশ্বজুড়ে অকাল মৃত্যুর কারণ, অবহেলা করলেই বিপদ! জানুন জরুরি ৭ লক্ষণ

উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার বিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) অনুমান অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ৩০-৭৯ বছর বয়সী ১.২৮ বিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এর মধ্যে ৪৬ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এই অবস্থা সম্পর্কে সচেতনই নন। উদ্বেগজনক তথ্য হলো, অর্ধেকেরও কম প্রাপ্তবয়স্কদের (৪২ শতাংশ) উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয় এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রতি ৫ জনের মধ্যে মাত্র ১ জন (২১ শতাংশ) তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছেন। যদিও উচ্চ রক্তচাপ সবসময় প্রাণঘাতী নয় এবং জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের মাধ্যমে সহজেই এটি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, তবে সঠিক সময়ে লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা অপরিহার্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে উচ্চ রক্তচাপের পরিস্থিতি বেশি দেখা যায়। উচ্চ রক্তচাপের কারণে মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এজন্য প্রাথমিক অবস্থায় এর কিছু লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক, উচ্চ রক্তচাপের কোন লক্ষণগুলো কখনোই অবহেলা করবেন না।

উচ্চ রক্তচাপের ৭টি জরুরি লক্ষণ:

১. তীব্র মাথাব্যথা: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ রক্তচাপ ‘ম্যালিগন্যান্ট হাইপারটেনশন’ নামক একটি অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই অবস্থায় মাথার খুলির অভ্যন্তরে গুরুতর চাপ তৈরি হয়, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক মাথাব্যথা সৃষ্টি করে। এই মাথাব্যথা কমানো কঠিন এবং এটি জ্বর বা মাইগ্রেনের মতো অন্যান্য মাথাব্যথার চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে।

২. বুকে ব্যথা (এনজাইনা): উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে যুক্ত বুকে ব্যথাকে ‘এনজাইনা’ (Angina) বলা হয়। এটি বুকের সাধারণ ব্যথার মতো নয়, যা নির্দিষ্ট সংক্রমণের কারণে ঘটে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এনজাইনাকে বুকে চেপে ধরা, চাপ, ভারী হওয়া বা অস্বস্তি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন। ‘এনজাইনা পেক্টোরিস’ নামেও পরিচিত এই ব্যথা হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচল কম হলে ঘটে থাকে, যা হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ হতে পারে।

৩. ঝাপসা দৃষ্টি: উচ্চ রক্তচাপ সরাসরি দৃষ্টিশক্তিকে প্রভাবিত করতে পারে। এতে চোখের রক্তনালিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে ‘হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি’ (Hypertensive Retinopathy) হয়। এমনকি উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে সচেতন না হলে কিংবা এর সঠিক চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণে না রাখলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তির গুরুতর অবনতি ঘটতে পারে।

৪. ক্লান্তি: ক্লান্তি শরীরের প্রায় প্রতিটি অসুস্থতার সঙ্গেই যুক্ত। তবে একটানা বা অস্বাভাবিক ক্লান্তি কিন্তু ভালো লক্ষণ নয়। উচ্চ রক্তচাপের রোগীও প্রায়শই ক্লান্তিতে ভোগেন। বেশিরভাগ মানুষই একে সাধারণ ক্লান্তি ভেবে অবহেলা করেন। মনে রাখবেন, সামান্য ক্লান্তিও কিন্তু বিভিন্ন রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। তাই এই লক্ষণ অবহেলা করে বিপদ ডেকে আনবেন না।

৫. নাক দিয়ে রক্ত পড়া: ঘন ঘন বা হঠাৎ নাক দিয়ে রক্ত পড়া উচ্চ রক্তচাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন রক্তচাপের মাত্রা খুব বেড়ে যায়।

৬. অনিয়মিত হৃদযন্ত্রের ছন্দ: হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন অনুভব করা উচ্চ রক্তচাপের একটি সম্ভাব্য লক্ষণ। এর ফলে বুকের ভেতর অস্বাভাবিক অনুভূতি হতে পারে।

৭. কানে বিভিন্ন শব্দ শোনা (টিনিটাস): কানে অস্বাভাবিক বা বিরামহীন শব্দ (যেমন ভোঁ ভোঁ বা শিস দেওয়ার মতো শব্দ) শোনা, যাকে ‘টিনিটাস’ (Tinnitus) বলা হয়, উচ্চ রক্তচাপের কারণে হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ না করলে কী হতে পারে?

উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহু গুণ বেড়ে যায়। হার্ট অ্যাটাক ঘটে যখন হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং অক্সিজেনের অভাবে হৃদপেশীর কোষগুলো মারা যায়। অন্যদিকে, ‘হার্ট ফেইলিওর’ ঘটে যখন হৃদপিণ্ড পর্যাপ্ত রক্ত ও অক্সিজেন পাম্প করতে পারে না। উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহকারী ধমনীও ফেটে গিয়ে স্ট্রোক হতে পারে, যা মারাত্মক শারীরিক অক্ষমতা বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

যদি নিয়মিত রক্তচাপ না মাপা হয়, তাহলে উচ্চ রক্তচাপ সহজে ধরা পড়বে না এবং শারীরিক জটিলতা বাড়তেই থাকবে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করা এবং প্রাথমিক এসব লক্ষণ এড়িয়ে না গিয়ে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা এড়ানো এবং একটি সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy