মাতৃগর্ভ থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানের প্রথম কান্না মায়ের সব যন্ত্রণা ভুলিয়ে দেয়। এই কান্নাই জানিয়ে দেয় ৯ মাস গর্ভাবস্থার পর পৃথিবীতে শিশুর প্রথম আগমন। কিন্তু জন্মেই শিশু কেন কাঁদে? আর যদি না কাঁদে, তাহলেই বা কী হয়?
পরিবেশের পরিবর্তন ও শরীরের প্রতিক্রিয়া
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, শিশু যখন ভ্রূণ অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে মায়ের গর্ভে বেড়ে ওঠে, তখন সে এক নির্দিষ্ট পরিবেশে অভ্যস্ত থাকে। তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে শুরু করে শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরন—সবকিছুই সেই গর্ভের ভেতরের পরিবেশের সঙ্গে মানানসই থাকে। কিন্তু যখন সেই শিশু গর্ভের বাইরে আসে, তার চেনা পরিবেশ সম্পূর্ণ পাল্টে যায়।
কান্নার গুরুত্ব: শ্বাসপ্রশ্বাস পরিষ্কারের প্রক্রিয়া
শিশুর শরীরের বিভিন্ন ফ্লুইড নিঃসরণের ফলে প্রায়শই হৃদপিণ্ডের শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ আটকে যায়। এমন পরিস্থিতিতে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। শিশু আচমকা এরকম দম বন্ধ করা পরিবেশে এসে কষ্টে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। এই কান্নার ফলেই শ্বাসপ্রশ্বাসের পথ পরিষ্কার হয়ে যায়। তখন শিশু স্বাভাবিকভাবে শ্বাস নিতে পারে এবং পৃথিবীর পরিবেশের সঙ্গে মানানসই হয়ে তার হৃদপিণ্ড কাজ করতে শুরু করে।
কান্না না হলে কী হয়?
যদি শিশু জন্মের পর এই কান্না না কাঁদে, তাহলে শ্বাসপ্রশ্বাসের পথ পরিষ্কার হয় না। ফলে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। এমনকি শিরা-উপশিরাগুলোতেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছতে পারে না, যা নানা রকমের প্রতিবন্ধকতার জন্ম দিতে পারে। এই কারণেই, জন্মেই যদি শিশু স্বাভাবিক নিয়মে না কাঁদে, তবে তাকে সাধারণত পশ্চাদ্দেশে আলতো করে থাপ্পড় মেরে কাঁদানো হয়, যাতে তার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হতে পারে।
নবজাতকের এই প্রথম কান্না তাই শুধু আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়, এটি তার সুস্থ জীবনের প্রথম ধাপ এবং পৃথিবীর সঙ্গে তার প্রথম সংযোগের এক গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন।