একসময় হৃদরোগের কথা উঠলে বয়স্কদের কথাই মনে আসত। তবে বর্তমানে এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। এখন ৩০ বছর বয়স পার না হতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বাড়ছে। এমনকি এই রোগে অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকেই। তাই কম বয়স থেকেই হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মারাত্মক হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে হলে প্রথমত ফাস্টফুড ত্যাগ করতে হবে। এর পাশাপাশি ঘি ও মাখনের মতো খাবারও এড়িয়ে চলা উচিত। পরিবর্তে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ও ফল খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও, প্রতিদিন নিয়ম করে পেঁয়াজ খেলে হৃদরোগের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, কীভাবে পেঁয়াজ হৃদরোগের সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে? চলুন জেনে নেওয়া যাক:
হৃদরোগের সমাধানে পেঁয়াজ:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেঁয়াজে এমন কিছু শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে এটি ট্রাইগ্লিসারাইডস এবং কোলেস্টেরলের মাত্রাকে স্বাভাবিক রাখতেও সহায়ক, যার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে। শুধু তাই নয়, পেঁয়াজে মজুত কুয়েরসেটিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত এই ভেষজ সেবন করা অপরিহার্য।
কীভাবে খাবেন পেঁয়াজ?
আপনার দৈনন্দিন রান্নায় পেঁয়াজের ব্যবহার বজায় রাখুন। এর পাশাপাশি ভাত খাওয়ার সময় কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পারেন। অথবা সালাদে শসার সঙ্গে পেঁয়াজ যোগ করে খান।
তবে শুধু হৃদরোগ প্রতিরোধই নয়, পেঁয়াজ আরও একাধিক জটিল রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। আসুন সেই বিষয়েও জেনে নেওয়া যাক:
ক্যানসার প্রতিরোধে:
ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ একবার শরীরে বাসা বাঁধলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। তাই এই ঘাতক রোগের হাত থেকে বাঁচতে পেঁয়াজ সহায়ক হতে পারে। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, পেঁয়াজে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। তাই এই ভয়াবহ রোগ থেকে দূরে থাকতে নিয়মিত পেঁয়াজ সেবন করা উচিত।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে নিয়মিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি সঠিক ডায়েট মেনে চলা জরুরি। ডায়েট থেকে তেল, মশলা, ঘি, মিষ্টি ও লবণ সমৃদ্ধ খাবার বাদ দিয়ে শাকসবজি খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। সেইসঙ্গে ডায়েটের তালিকায় পেঁয়াজ যোগ করলে তা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। এমনকি যারা প্রি-ডায়াবেটিস স্তরে রয়েছেন, তারাও ডায়াবেটিস থেকে দূরে থাকতে এর উপকারিতা পেতে পারেন।
বাড়ায় হাড়ের ঘনত্ব:
আধুনিক জীবনযাত্রায় ৩০ বছর পেরোলেই হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করে। বিশেষত মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে নিয়মিত পেঁয়াজ খেলে হাড়ের জোর বাড়ানো সম্ভব। কারণ, পেঁয়াজে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়, যার ফলে অস্টিওপোরোসিসের মতো সমস্যা দূরে থাকে এবং হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।
সুতরাং, কম বয়স থেকেই হার্টের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য জটিল রোগ থেকে বাঁচতে নিয়মিত পেঁয়াজ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা বুদ্ধিমানের কাজ।