মাঝেমধ্যেই পেটে ব্যথার সমস্যা রয়েছে আমাদের মাঝে অনেকেরই। কিন্তু এর পেছনে নানাবিধ কারণ থাকতে পারে। হঠাৎ মাথার যন্ত্রণা। কিন্তু চিকিৎসকের কাছে যেতেই তিনি বলে দিচ্ছেন তেমন কিছুই হয়নি আপনার। সারাদিন শরীরে অ্স্বস্তি বোধ লেগেই রয়েছে। এই বিশেষ সমস্যার নাম হলো কৃমি।
গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল নালীর মধ্যে বসবাসকারী পরজীবীই হলো কৃমি। এরা প্রাথমিকভাবে অন্ত্রের প্রাচীরের সাথে লেগে থাকে। কৃমি বিভিন্নধরনের হয়ে থাকে। তবে এরমধ্যে ফিতাকৃমি, কেঁচোকৃমি ইত্যাদি বেশি ক্ষতিকর। সাধারণত দূষিত খাবার এবং জলের মাধ্যমে কৃমি শরীরে প্রবেশ করে। সাধারণ কৃমি দূর করার জন্য কৃমিনাশক ওষুধ গ্রহণ করা হয়। তবে ঘরোয়া কিছু উপায়ে এই সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব। এমন কিছু উপায় নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন।
১. রসুন- রসুন হলো অ্যান্টি-প্যারাসাইট খাবার। কাঁচা রসুনে সালফারযুক্ত অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যার প্রকৃতি অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক ধরণের। এছাড়াও রসুনে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাংগাল ও অ্যান্টি সেপ্তিক উপাদান থাকে যা শরীরের জীবাণু ধ্বংস করতে পারে। প্রতিদিন খালি পেটে তিনটি রসুনের কোয়া খান। এটি সপ্তাহে পাঁচদিন খাওয়ার চেষ্টা করুন। এছাড়া দুটি রসুন এক এবং আধা কাপ দুধে জ্বাল দিন। এবার এটি পান করুন। এটি এক সপ্তাহ পান করুন।
২. হলুদ- কাঁচা হলুদ অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। কৃমির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে এটি খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। আধা কাপ উষ্ণ জলে সামান্য হলুদ গুঁড়া এবং নুন মিশিয়ে খান। এই মিশ্রণ ৫ দিন পর পর খেতে পারলে দ্রুত উপকার পাবেন।
৩. নারকেল- কৃমি দূর করতে বেশ কার্যকর একটি উপায় হলো নারকেল। সকালের নাস্তায় এক টেবিল চামচ নারকেল কুচি খান। নাস্তা খাওয়ার তিন ঘন্টা পর এক গ্লাস কুসুম গরম দুধে দুই টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে পান করুন। এটি নিয়মিত পান করুন। তবে ক্যাস্টর অয়েল পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের এবং গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল সমস্যাগ্রস্তদের জন্য প্রযোজ্য নয়। নারকেল কুচি ছাড়াও চার থেকে ছয় টেবিল চামচ বিশুদ্ধ নারকেল তেল পান করতে পারেন। এটিও কৃমি দূর করতে সাহায্য করবে।
৪. কাঁচাপেঁপে- এক টেবিল চামচ কাঁচা পেঁপের রসের সাথে মধু তিন বা চার টেবিল চামচ গরম জলে মিশিয়ে নিন। এটি সকালে খালি পেটে পান করুন। দুই ঘন্টা পর এক গ্লাস কুসুম গরম দুধের সাথে দুই টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে পান করুন। এটি দুই থেকে তিন দিন পান করুন। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে অর্ধেক করে নিন। এছাড়া পেঁপের বীচি গুঁড়ো করে নিন। এক কাপ কুসুম গরম দুধ বা জলের সাথে দুই চা চামচ পেঁপের গুঁড়ো মিশিয়ে নিন। এটি খালি পেটে তিনদিন পান করুন।
৫. অ্যাপল সিডার ভিনিগার- খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে অ্যাপল সিডার ভিনিগার খেতে পারলে তা পেটে অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। ওই অ্যাসিডে শরীরে প্যারাসাইট (পরজীবী) ও ক্ষতিকর জীবাণুর লার্ভা মারতে সাহায্য করে।
৬. মিষ্টি কুমড়োর বিচি- ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিলেন্ড মেডিকেল সেন্টার কৃমি দূর করতে মিষ্টি কুমড়োর বীচি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মিষ্টি কুমড়োতে থাকা উপাদান অন্ত্রের কৃমিকে মেরে ফেলে। তিন কাপ জলে দুই টেবিল চামচ মিষ্টি কুমড়ো বীচি গুঁড়ো দিয়ে জ্বাল দিন ৩০ মিনিট।
ঠান্ডা হলে এটি পান করুন। এছাড়া এক টেবিল চামচ ভাজা মিষ্টি কুমড়ো বীচি গুঁড়োর সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খান। এরপর নাস্তায় কলা বা কিউই খান।
৭. আনারস- আনারসের ব্রোমেলিন এনজাইম শরীরে বাসা বাঁধা প্যারাসাইট বা পরজীবী মারতে সাহায্য করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, পর পর তিন-চার দিন শুধু আনারস খেয়ে থাকতে পারলে কৃমির সমস্যা সম্পূর্ণ সারানো সম্ভব।
৮. লবঙ্গ- লবঙ্গে থাকা অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টি পারাসাইটিক, ব্যাকটিরিসাইডাল রয়েছে যা কৃমির ডিম ধ্বংস করে দেয়। এক কাপ গরম জলে এক চা চামচ লবঙ্গের গুড়ো মিশিয়ে ১০-২০ মিনিট জ্বাল দিন। তারপর পান করুন। এটি দিনে তিনবার পান করুন। এক সপ্তাহ পান করুন। দেখেবন কৃমি দ্রুত মারা গেছে।
৯. গাজর- কৃমির সমস্যা দূর করতে রোজ সকালে খালি পেটে একটি করে গাজর খান। গাজরে থাকা ভিটামিন এ, সি, বিটা ক্যারোটিন এবং জিঙ্ক শরীরে কৃমি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
১০. শশার বীজ- কৃমির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে শশার বীজ অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। শশার বীজ শুকিয়ে, গুঁড়া করে রোজ ১ চামচ করে খেতে পারলে দ্রুত উপকার পাবেন