নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত কিডনি রোগ আজকাল এক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একবার কিডনির সমস্যা শুরু হলে তার থেকে মুক্তি পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে, কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে কিডনিকে সুস্থ রাখা সম্ভব এবং অনেক গুরুতর সমস্যা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়। যারা ইতিমধ্যেই কিডনির সমস্যায় ভুগছেন অথবা সুস্থ কিডনি নিয়েই দীর্ঘ জীবন চান, তাদের জন্য রইল কিছু জরুরি পরামর্শ:
১. পর্যাপ্ত জল পান করুন, প্রস্রাব চেপে রাখবেন না:
কিডনি সুস্থ রাখার সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উপায় হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা। প্রতিদিন ৭-৮ গ্লাস জল পান করা অত্যাবশ্যক। এটি কিডনিকে শরীর থেকে টক্সিন এবং বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। একই সাথে, কখনোই প্রস্রাব চেপে রাখবেন না। এতে মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI) হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা পরোক্ষভাবে কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। সময় মতো মূত্রত্যাগ করা কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ নয়, বিশেষত ব্যথানাশক:
আজকাল সামান্য ব্যথাতেও অনেকে ফার্মেসি থেকে নিজে নিজে ব্যথানাশক (পেইন কিলার) কিনে সেবন করেন। এই প্রবণতা কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ, বিশেষ করে ব্যথানাশক ঔষধ সেবন করা থেকে বিরত থাকুন। অনেক ব্যথানাশক কিডনির ওপর সরাসরি বিরূপ প্রভাব ফেলে এবং দীর্ঘমেয়াদে কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট করতে পারে। প্রয়োজনে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. চল্লিশোর্ধ্বদের জন্য নিয়মিত পরীক্ষা:
আপনার বয়স যদি ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে হয়, তবে কিছু নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো আপনার জন্য অপরিহার্য। বিশেষ করে, বছরে অন্তত একবার আপনার ডায়াবেটিস এবং ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করান। এই দুটি রোগ কিডনি ক্ষতির অন্যতম প্রধান কারণ। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগগুলো শনাক্ত হলে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে কিডনির ক্ষতি অনেকটাই এড়ানো সম্ভব।
৪. ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
যদি আপনার ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ (ব্লাড প্রেসার) থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত ঔষধ সেবন, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার সঠিক ব্যবস্থাপনা এই দুটি রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘমেয়াদে কিডনির সূক্ষ্ম রক্তনালীগুলোর ক্ষতি করে, যা ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস করে এবং কিডনি বিকলের দিকে ঠেলে দেয়।
কিডনি আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এর যত্ন নেওয়া মানেই নিজের সুস্থ জীবন নিশ্চিত করা। উপরের সহজ নিয়মগুলো মেনে চললে আপনিও সুস্থ কিডনি নিয়ে দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন উপভোগ করতে পারবেন। মনে রাখবেন, প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে উত্তম!