‘নমস্তে’ বলে ফোন নম্বর দিয়েছিলেন লতাজি! জীবনের প্রথম গান শুনেই ভক্ত হয়ে গেলেন দমদমের এই মানুষ

সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের ৯৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দিকে দিকে চলছে নানা শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। তবে তাঁকে ভালোবেসে যিনি আস্ত একটি সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন, তিনি হলেন দমদমের বাসিন্দা স্নেহাশিস চট্টোপাধ্যায়। তাঁর শ্রীরামপুরের সংগ্রহশালায় রয়েছে প্রায় ৩,০০০টি রেকর্ড এবং শত শত ক্যাসেট, সিডি ও ডিভিডি-র বিশাল সংকলন। ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিরা তাঁর এই অসামান্য ভালোবাসার যাত্রাপথের সাক্ষী হলেন।

এক গান বদলে দিল জীবন
স্নেহাশিস চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁর বাবা-মা দুজনেই সঙ্গীতপ্রেমী ছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবনে লতাজির কণ্ঠের প্রথম প্রভাব পড়ে ১২ বছর বয়সে।

স্নেহাশিস বাবু বলেন:

“একদিন মাঠে ফুটবল খেলতে খেলতে কানে ভেসে এল একটা গান— ‘বাবুল পেয়ারে… নিশদিন তুঝে পুকারে মন…’। গানটা শুনেই খেলা থামিয়ে দিলাম। পরে জানলাম গানটা লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া। সেই থেকে ওই কণ্ঠটার প্রতি টান অনুভব করতে শুরু করলাম।”

প্রায় ২০ বছর বয়সে মহম্মদ রফিকে নিয়ে একটি পরিসংখ্যানমূলক লেখা দেখে তাঁর মনে হয়, লতাজিকে নিয়েও একইরকম কাজ করা যায়। তাঁর এই কাজের শুরু হয় প্রখ্যাত সংগ্রাহক সূরজলাল বন্দ্যোপাধ্যায় (হারু দা)-এর হাত ধরে। তিনিই স্নেহাশিস বাবুকে রেকর্ড লেবেল ও ক্যাটালগ সংগ্রহের মাধ্যমে পদ্ধতিগতভাবে কাজ করা শেখান।

গিনেস রেকর্ডের ভুল সংশোধন ও লতাজির চিঠি
স্নেহাশিস বাবুর প্রথম বই ‘লতা গীতকোষ’ বেরোয় ১৯৯৭ সালে কলকাতা বইমেলায়, যার ভূমিকা লিখেছিলেন পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘ ৪০ বছরের গবেষণার ভিত্তিতে তিনি দাবি করেন, প্রচলিত ‘গিনেস বুক অফ রেকর্ডস’-এর তথ্য ভুল।

তাঁর গবেষণা অনুযায়ী:

লতা মঙ্গেশকর মোট ৩৮টি ভাষায় ৬ হাজার ৭৪৪টি গান গেয়েছেন।

তিনি লেখা প্রত্যেকটি বই লতাজির কাছে পাঠিয়ে দিতেন। তাঁর এই আগ্রহে খুশি হয়েই লতাজি তাঁকে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দেন। তাঁর উৎসাহেই প্রকাশিত হয়েছে এই ‘লতা গীতকোষ’-এর ১৬টি ভলিউম।

বিরল প্রাপ্তি ও বাংলায় কথোপকথন
লতাজির সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয় ১৯৯৬ সালে সল্টলেক স্টেডিয়ামে। দেখা হতেই লতাজি তাঁকে ‘নমস্তে’ বলে শুভকামনা লিখে দেন এবং ব্যক্তিগত ফোন নম্বর দেন (যদিও তা গোপন রাখতে বলেছিলেন)।

স্নেহাশিস বাবুর জীবনের অন্যতম বড় প্রাপ্তি হলো লতাজির বাংলায় কথা বলা। “আমি যেহেতু খুব বাজে হিন্দি বলি, তাই উনি আমার সঙ্গে বাংলাতেই কথা বলতেন। এটা এক বিরল নজির,” বলেন স্নেহাশিস।

তাঁর জীবনের আরও একটি স্মরণীয় মুহূর্ত হলো— ২০০৬ সাল থেকে তিনি যে গানের প্রতিষ্ঠানটি চালান, তার নামকরণ স্বয়ং লতাজি করেন ‘স্বরগঙ্গা’। ফ্যাক্সে তিনি শুভকামনা জানিয়ে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন, যা সযত্নে রাখা আছে স্নেহাশিস বাবুর সংগ্রহে।

যদিও সংগ্রহশালা নিয়ে তাঁর পরিবার খুশি ও সহায়ক, তবুও এই বিশাল কাজ ভবিষ্যতে কে সামলাবেন, সেই উপযুক্ত উত্তরসূরী খুঁজে না পাওয়ায় কিছুটা চিন্তিত এই লতাপ্রেমী।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy