মালয়েশিয়ার একটি হিন্দু মন্দিরে আশীর্বাদ দেওয়ার নাম করে এক ভারতীয় পুরোহিতের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন মিস গ্র্যান্ড মালয়েশিয়া ২০২১ খেতাবজয়ী অভিনেত্রী লিশাল্লিনি কানারান। এই বিস্ফোরক অভিযোগের পর অভিযুক্ত পুরোহিতের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে সে দেশের পুলিশ।
২১ জুনের ঘটনা: মন্দিরের ভিতরেই হেনস্থা
ঘটনাটি ঘটেছে ২১ জুন, সেপাং জেলার মারিয়াম্মান মন্দিরে, যা কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেই অবস্থিত। ওইদিন মন্দিরে একা গিয়েছিলেন লিশাল্লিনি। তিনি জানান, মন্দিরের এক পুরোহিতের সাহায্যে তিনি সাধারণত পূজার নিয়মকানুন শিখতেন। সেদিনও সেই পুরোহিত তাঁকে বলেন যে, তিনি তাঁর জন্য পবিত্র জল ও সুরক্ষা সূত্র এনেছেন আশীর্বাদ হিসেবে। এরপর লিশাল্লিনিকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে যান ওই ব্যক্তি।
লিশাল্লিনির ইনস্টাগ্রাম পোস্ট: ‘আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম’
নিজের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিশাল্লিনি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। তিনি জানান, কিছুটা অস্বস্তি সত্ত্বেও তিনি পুরোহিতের ঘরে যান। সেখানে পুরোহিত তাঁর গায়ে ও মুখে বারবার জলের ছিটে দিতে থাকেন, এমনকী চোখ খোলার অবস্থাও ছিল না তাঁর। এরপর ওই ব্যক্তি তাঁকে পোশাক তুলতে বলেন। লিশাল্লিনি জানান, তিনি তা না মানায় পুরোহিত তাঁকে কটাক্ষ করেন এবং হঠাৎই তাঁর জামার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে তাঁকে স্পর্শ করতে থাকেন।
লিশাল্লিনি তাঁর পোস্টে লেখেন, “আমার মাথায় হাত রেখে ও প্রার্থনা করার মতো কিছু একটা বলছিলেন। এরপর হঠাৎই আমার ব্লাউজের ভিতর হাত ঢুকিয়ে আমাকে স্পর্শ করেন। আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।”
অভিযোগ দায়ের ও পুলিশের পদক্ষেপ
কয়েকদিন হতবাক হয়ে থাকার পর লিশাল্লিনি তাঁর মা ভারত থেকে ফিরে এলে ঘটনাটি জানান। গত ৪ জুলাই, পরিবারের সঙ্গে তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পাওয়ার পরে জানা যায়, অভিযুক্ত পুরোহিত ভারতীয় নাগরিক এবং মন্দিরের মূল পুরোহিত বিদেশে থাকায় সাময়িকভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সেপাং জেলার পুলিশ প্রধান এসিপি নরহিজাম বাহামান মালয় মেল-কে জানান, “অভিযুক্ত ভারতীয় নাগরিক। প্রাথমিকভাবে অভিযোগ, তিনি মুখ ও গায়ে পবিত্র জল ছিটানোর নামে ভুক্তভোগীকে স্পর্শ করেন।”
এদিকে লিশাল্লিনির অভিযোগ, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এর আগেও কেউ অভিযোগ তুলেছিলেন, কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ বিষয়টি চেপে গিয়েছিল। তাঁর কথায়, “যেখানে নিজেকে সবথেকে নিরাপদ ভাবতাম, সেখানেই এমন ঘটনা ঘটবে ভাবতেই পারিনি। এই বিশ্বাসঘাতকতা সবচেয়ে বড় আঘাত।”
এই ঘটনা মালয়েশিয়ার ভারতীয় কমিউনিটির মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এবং মন্দিরের পবিত্র পরিবেশে এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। পুলিশ দ্রুত অভিযুক্তকে খুঁজে বের করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।