বলিউড তারকা সলমন খান (Salman Khan) এবং ঐশ্বর্যা রাইয়ের (Aishwarya Rai) বহু পুরোনো, আলোচিত সম্পর্ক আজও বারংবার চর্চায় ফেরে। এবার এই চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছে সঞ্জয় লীলা বনশালীর কালজয়ী ছবি ‘দেবদাস’ (Devdas Movie)। ২০০২ সালের এই জুলাই মাসেই মুক্তি পেয়েছিল শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই ছবিটি। ২৩ বছর পর, এই ব্লকবাস্টার ছবির সঙ্গে সলমনের এক অপ্রত্যাশিত এবং হৃদয়বিদারক যোগসূত্র নিয়ে নতুন করে বলিউডে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সাধারণ দর্শক ‘দেবদাস’ বলতেই শাহরুখ খান এবং ঐশ্বর্যা রাইয়ের অমর রসায়নকে মনে করেন। ছবিতে ‘দেবদাস’-এর চরিত্রে শাহরুখ, আর ‘পার্বতী’ বা ‘পারো’র চরিত্রে ছিলেন ঐশ্বর্যা। কিন্তু যে সময় এই ছবির শুটিং চলছিল, সেই সময়ে বাস্তবের ‘দেবদাস’ হয়ে উঠেছিলেন সলমন খান। বিখ্যাত সাংবাদিক অনুপমা চোপড়া তাঁর ‘King of Bollywood: Shah Rukh Khan and the Sedative World of Indian Cinema’ বইয়ে এই মর্মস্পর্শী কাহিনি সবিস্তারে তুলে ধরেছেন, যা সম্প্রতি আবারও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
‘হম দিল দে চুকে সনম’ থেকে ‘দেবদাস’-এর সেটে ভাঙনের সুর
অনুপমা চোপড়া তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘হম দিল দে চুকে সনম’ ছবির সেটেই সলমন ও ঐশ্বর্যার প্রেমের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু ‘দেবদাস’-এর শুটিং শুরু হতে হতে সেই সম্পর্ক ভাঙনের মুখে এসে দাঁড়ায়। ঐশ্বর্যার প্রতি সলমনের অতি-অধিকারবোধ (possessiveness) এবং নিজের প্রতি তাঁর ধ্বংসাত্মক প্রবণতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। অনুপমার কথায়, “সেই সময় বাস্তবে দেবদাস হয়ে উঠেছিলেন সলমন।”
অনুপমা আরও লেখেন, “প্রেম বাঁচাতে নিজেকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়ে উঠেছিলেন সলমন। দেবদাসের শুটিং চলাকালীন তিনি যেন ছবির এক অদৃশ্য কর্মী হয়ে উঠেছিলেন। মদ্যপানের আসক্তিতে ডুবে যাচ্ছিলেন তিনি। রাতের পর রাত ঐশ্বর্যার ট্রেলারের মেঝেয় পড়ে থাকতেন।” সলমনের এই অপ্রত্যাশিত উপস্থিতি পরবর্তীতে ছবির একটি দৃশ্যে ক্যামেরাবন্দী হয়ে যায়, যা আজও ছবির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছে।
ঐশ্বর্যার পায়ে সলমনের হাত: এক ক্যামেরাবন্দী হৃদয়বিদারক মুহূর্ত
এই ছবির ‘মোরে পিয়া’ গানটির শুটিং চলছিল। একটি দৃশ্যে নদী থেকে জল নিয়ে ফেরা ঐশ্বর্যার পায়ে কাঁটা বিঁধে যায়। চিত্রনাট্য অনুযায়ী, ঐশ্বর্যার পা ছুঁয়ে সেই কাঁটা বের করতে হতো শাহরুখকে। শুটিংয়ের সময় এই দৃশ্যের খুঁটিনাটি শাহরুখকে বোঝাচ্ছিলেন পরিচালক বনশালী। কীভাবে গোটা দৃশ্যটি অভিনয় করতে হবে, তা বোঝানোর জন্য সলমন নিজে এগিয়ে আসেন। বনশালীর কথামতো তিনি ঐশ্বর্যার পা ছুঁয়ে কাঁটা বের করে দেন।
আশ্চর্যজনকভাবে, ওই গোটা দৃশ্যটি ক্যামেরায় বন্দি হয়ে যায়। এবং সঞ্জয় লীলা বনশালী সেই ফুটেজ মুছে ফেলেননি, বরং ছবির মধ্যেই রেখে দেন। ফলস্বরূপ, ছবিতে ‘মোরে পিয়া’ গানের দৃশ্যে যখন ঐশ্বর্যার পা থেকে কাঁটা বের করতে যে হাত এগিয়ে আসে, সেটি আসলে শাহরুখের নয়, সলমন খানেরই।
অনুপমা চোপড়া এই গোটা ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে লেখেন, “ওই দৃশ্যটি ছিল অত্যন্ত মর্মস্পর্শী। খরচের খাতায় ফেলে দেওয়া, বিষাদগ্রস্ত এক প্রেমিক, পর্দায় নিজেরই চরিত্র যেন ফুটিয়ে তোলেন। ঐশ্বর্যা সেই দৃশ্য দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন। সেটিই ছিল শেষ বার যখন একসঙ্গে দু’জনকে কোনো ছবিতে দেখা গিয়েছিল।”
‘দেবদাস’ ছবিটি নিঃসন্দেহে শাহরুখ, ঐশ্বর্যা, মাধুরী দীক্ষিত এবং স্বয়ং বনশালীর ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কিন্তু এই নতুন তথ্যপ্রবাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে, এই ছবিটি সলমন খানের জীবনের এক বিষাদময় অধ্যায়কেও চিরদিনের জন্য ফ্রেমবন্দী করে রেখেছে। রূপালী পর্দায় শাহরুখ-ঐশ্বর্যার প্রেমগাথার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে বাস্তবের এক ভাঙা হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি, যা আজও দর্শকদের অজানা।