সনাতন ধর্মের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বর্ণাঢ্য উৎসব, রথযাত্রা, আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই শুরু হতে চলেছে। ভারতের ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে এই উৎসব বিশেষ উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে পুরী, মাহেশ, ইসকনের মন্দিরে এবং অন্যান্য বনেদি বাড়ি ও মন্দিরে যেখানে জগন্নাথদেব পূজিত হন, সেখানেই মহা ধুমধাম করে এই মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
কেন পালিত হয় রথযাত্রা? এক পৌরাণিক সফর: রথযাত্রার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা পুরাণের কাহিনি। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, স্নানযাত্রার পর নিভৃতবাস থেকে বেরিয়ে আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে জগন্নাথদেব তাঁর দাদা বলরাম এবং বোন সুভদ্রাকে নিয়ে মাসির বাড়ি যান। রথযাত্রায় শুধু জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা নন, তাঁদের সঙ্গে সহযাত্রী হিসেবে থাকেন মদনমোহন (জগন্নাথের প্রতিনিধি), রামকৃষ্ণ (বলরামের প্রতিনিধি) এবং সুদর্শনা (সুভদ্রার প্রতিনিধি)। অন্য একটি মত অনুসারে, দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের স্মরণে এই উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। রথযাত্রা উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে বর্ণাঢ্য মেলা বসে, এবং পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে যাত্রাপালার আয়োজনও বেশ জনপ্রিয়।
মুক্তির পথ রথযাত্রা: পুরীর রথে জগন্নাথ মহাপ্রভুর দর্শন অত্যন্ত শুভ বলে বিবেচিত হয়। জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলভদ্রের জন্য তিনটি পৃথক রথ তৈরি করা হয়, যা দেখার জন্য প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও দর্শনার্থী ভিড় জমান। এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে, কোনো ব্যক্তি যদি রথযাত্রায় পূর্ণ নিষ্ঠা ও ভক্তি সহকারে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তিনি জন্ম ও মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি লাভ করে মোক্ষ প্রাপ্তি করতে পারেন।
জানা যায়, শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে রথে চড়ে দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রাকে দেখতে যান জগন্নাথদেব। সেই উপলক্ষ্যে ওই তিথি মেনে গুন্ডিচা মন্দিরে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার আয়োজন হয়। এই যাত্রাকে সোজা রথ যাত্রা বলা হয়। এর সাত দিন পর, মন্দির থেকে দেবতার ফিরতি যাত্রাকে উল্টোরথ যাত্রা বা পুনর্যাত্রা বলা হয়। মাসির বাড়ি যাওয়া নিয়ে রথযাত্রার আরও একটি পৌরাণিক কাহিনিও প্রচলিত আছে, তবে জগন্নাথধাম পুরী ঘিরে রয়েছে অসংখ্য লোককথা ও কাহিনি।
রথযাত্রা ২০২৫ – দিনক্ষণ ও মাহেন্দ্রক্ষণ:
- রথযাত্রা: ২৭শে জুন, শুক্রবার (১২ই আষাঢ়)। দ্বিতীয়া তিথি ২৬শে জুন দুপুর ২টা ৩৯ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড থেকে ২৭শে জুন দুপুর ১টা ১৮ মিনিট ২৩ সেকেন্ড পর্যন্ত থাকবে।
- উল্টো রথযাত্রা (পুনর্যাত্রা): ৫ই জুলাই, শনিবার (২০শে আষাঢ়)।
- মাহেন্দ্রযোগ: দিন: সকাল ৫টা ৫৬ মিনিট থেকে ৬টা ৪৯ মিনিট পর্যন্ত এবং সকাল ৯টা ২৯ মিনিট থেকে ১০টা ২২ মিনিট পর্যন্ত।
- অমৃতযোগ: দিন: দুপুর ১২টা ৯ মিনিট থেকে ২টা ৪৯ মিনিট পর্যন্ত। রাত্রি: ৮টা ৩০ মিনিট থেকে ১২টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত এবং রাত ২টা ৫৫ মিনিট থেকে ৩টা ৩৭ মিনিট পর্যন্ত এবং ভোর ৩টা ৩৭ মিনিট থেকে ৪টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত।
পুরীর রথযাত্রার বিস্তারিত সূচী (২৭শে জুন – ৫ই জুলাই):
- স্নান পূর্ণিমা: ১২ই জুন, ২০২৫ (ইতোমধ্যেই পালিত হয়েছে)
- অনবসর (বিশ্রামের সময়): ১৩ই জুন – ২৬শে জুন, ২০২৫
- গুন্ডিচা মার্জনা (মন্দির পরিষ্কার): ২৬শে জুন, ২০২৫ (আজ)
- রথযাত্রা: ২৭শে জুন, ২০২৫
- হের পঞ্চমী: ১লা জুলাই, ২০২৫
- বহুদা যাত্রা (রথযাত্রার প্রত্যাবর্তন): ৪ঠা জুলাই, ২০২৫
- সুনা বেসা (দেবতাদের সোনালী পোশাক): ৫ই জুলাই, ২০২৫
- নীলাদ্রি বিজয়া (মূল মন্দিরে প্রত্যাবর্তন): ৫ই জুলাই, ২০২৫
এই পুণ্যময় রথযাত্রা সকলের জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসুক, এই কামনাই রইল।