রান্নায় একটু তেল মসলার আধিক্য না থাকলে খাবার যেন মুখোরোচক হয় না। সবার ধারনা, তেল মসলায় মাখামাখি না হলে তরকারি মজাই হয় না। এই ধারনা থেকে ভাজাপোড়াও বেশি তেল দিয়ে রান্না করেন অনেকে। যার ফলে পেটে গ্যাস, অম্বলসহ দেখা দেয় নানা সমস্যা। এছাড়াও শরীরে চর্বি বেড়ে যায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুঁকিও।
কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে মানুষের ভাবনার। যে খাবার মুখে যত স্বাদ জোগায়, তা স্বাস্থ্যের হানিও ঘটায় ততো। ফলে মানুষ এখন সচেতন হয়েছে। দিনদিন মানুষের কাছে কম তেলে রান্না করা খাবার জনপ্রিয় হচ্ছে। অনেকে আবার তেল ছাড়া রান্নার প্রক্রিয়াও চালাচ্ছেন।
স্বল্প তেলের পাশাপাশি আগুনের তাপে ভাজা, পোচ, ভাপ কিংবা পুরোপুরি সিদ্ধের মতো বিভিন্ন উপায়কে তেলের বিকল্প হসেবে ভাবা যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে অলিভ অয়েল, সয়াবিন কিংবা অন্য যে কোনো তেলই ব্যবহার করুন না কেন, কোনোটাই শরীরের জন্য ভালো নয়। তেলে ফ্যাটের উপস্থিতি যতটা, সেখানে অন্যান্য পুষ্টিগুণ উপেক্ষিত। স্বল্প তেলে রান্না যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমায় তেমনি খরচও।
রান্নায় তেলের স্বল্প ব্যবহারের জন্য পুষ্টিবিদরা কিছু উপদেশ দিয়েছেন। তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে রান্নার পাত্র নির্বাচন। ননস্টিক পাত্রে যেমন অল্প তেলে রান্না করা যায়, তেমনি তেল ছাড়াও করা যায়। আর এতে পোড়া লেগে যাওয়ার ভয় নেই। কিন্তু ননস্টিকি পাত্রে ক্ষতিকারক টেফলন থাকায় অনেকেই এটি এড়াতে চান। সেক্ষেত্রে ভালো মান ও ভারী স্টেইনলেস স্টিলের পাত্র ব্যবহার করতে পারেন। লোহা কিংবা সিরামিক টাইটেনিয়ামের প্যান হতে পারে ভালো অপশন। এগুলো তেল ছাড়া রান্নার জন্য একেবারে জুতসই।
শুকনা খাবার কিংবা ঝোল ছাড়া যেকোনো চচ্চড়ি তৈরির জন্য ব্যবহার করতে পারেন ফ্লেম ডিফিউজার (এক ধরনের আগুন নিয়ন্ত্রক)। এতে চুলার আঁচ সরাসরি হাঁড়িতে লাগে না। ফলে আচমকা খাবার পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।
এবার আসা যাক রান্নার প্রক্রিয়ায়। বেশিরভাগ রাঁধুনীর অভ্যাস হলো রান্নার সময় বোতল দিয়েই সরাসরি তেল ঢেলে দেওয়া। এতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তেল ব্যবহার করাই বেশি হয়। এক্ষেত্রে চামচ দিয়ে পরিমাণমত তেল নিলে কমবে তেলের ব্যবহার।
মচমচে ভাজাপোড়া খেতে চাইলে তেলের বিকল্প হিসেবে জল ব্যবহার করা যেতে পারে। এক-দুই টেবিল চামচ জল ব্যবহার করুন। রান্নায় যে সময়টা আপনি তেল ব্যবহার করেন, ততক্ষণে অল্প জল দিয়ে পেঁয়াজ ও অন্যান্য মসলা দিয়ে কষালে তেল ছাড়া খুব সহজে রান্না করতে পারবেন। খাবার পোড়ার আশঙ্কা কমাতে কাঠের চামচ ব্যবহার করতে পারেন।
বর্তমানে বেকিং খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বেকিং করা খাবার স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভাল। প্রায় সবার বাড়িতেই এখন ওভেন রয়েছে। যাতে সবজি, মাছ, মাংসসহ প্রায় সব ধরনের খাবারই খুব সামান্য তেলের ব্যবহারে বেক করে তৈরি করা যায়। আর ভাপে তৈরি করা খাবার অনেক সুস্বাদু। চিংড়ি ভাপা, ইলিশ ভাপা কিংবা ভাপা ডিমের তরকারি অনেক জনপ্রিয়। ভাপে রান্না করার জন্য রয়েছে অনেক রেসিপি।