ভারত-পাকিস্তান এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অতন্দ্র প্রহরীর কাজ করেন বিএসএফ (BSF) জওয়ানরা। কিন্তু সীমান্ত রক্ষার সেই কঠিন লড়াইয়ের চেয়েও এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে জওয়ানদের ভেতরের লড়াই। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক রিপোর্টে উঠে এসেছে বিএসএফ জওয়ানদের মধ্যে চাকরি ছাড়ার প্রবণতা এবং আত্মহত্যার এক ভয়ংকর ছবি।
পরিসংখ্যান যা শিউরে ওঠার মতো:
২০১৮ থেকে ২০২২ সালের তথ্য বলছে, বিএসএফ-এর অন্দরে মানসিক সংকট চরমে:
আত্মহত্যা: এই ৫ বছরে ১৭৪ জন জওয়ান আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।
স্বেচ্ছাবসর: প্রায় ২৩,৫৫৩ জন জওয়ান নির্দিষ্ট সময়ের আগেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।
মানসিক চাপ: সিআরপিএফ-এর পরেই বিএসএফ-এ এই ধরণের ঘটনার হার বর্তমানে সর্বোচ্চ।
কেন এই চরম পদক্ষেপ?
রিপোর্ট তৈরির দায়িত্বে থাকা কমিটির মতে, প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আত্মহত্যার কারণ ‘ব্যক্তিগত’। তবে এর গভীরে রয়েছে আরও অনেক স্তর:
পরিবার থেকে দূরত্ব: মাসের পর মাস পরিবারের থেকে দূরে থাকা জওয়ানদের মধ্যে একাকীত্ব এবং পারিবারিক দ্বন্দ্ব বাড়িয়ে তুলছে। সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও ডিউটির চাপে বাড়ি গিয়ে তা সমাধান করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
কাজের পরিবেশ: দীর্ঘ সময় ডিউটি, ছুটির অভাব এবং ধীরগতির প্রমোশন জওয়ানদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে দিচ্ছে।
সিনিয়রদের সাথে দূরত্ব: অনেক ক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সাথে সঠিক যোগাযোগের অভাব বা কর্মক্ষেত্রে অপমানের ট্রমাও জওয়ানদের চরম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করছে।
ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা: নতুন পেনশন স্কিম (NPS) নিয়ে অসন্তোষ এবং আর্থিক নিরাপত্তাহীনতাও চাকরি ছাড়ার অন্যতম বড় কারণ।
সরকারের পদক্ষেপ ও আগামীর চ্যালেঞ্জ:
টাস্ক ফোর্সের রিপোর্টে জওয়ানদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সীমান্তরক্ষীদের জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং, ছুটির প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং পরিবারের সাথে যোগাযোগের সুব্যবস্থা করার দাবি উঠেছে। দেশের সীমান্ত সুরক্ষিত থাকলেও, সেই সীমান্ত রক্ষাকারীদের মনস্তাত্ত্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।