বড়দিনের আনন্দ ম্লান করে ওড়িশা থেকে এল মর্মান্তিক খবর। শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার ‘অপরাধে’ বাংলাদেশি সন্দেহে ওড়িশার সম্বলপুরে পিটিয়ে খুন করা হল মুর্শিদাবাদের ২১ বছর বয়সী এক পরিযায়ী শ্রমিককে। এই ঘটনায় আরও দুই শ্রমিক গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক তরজা। বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাঙালিদের উপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালানো হচ্ছে বলে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
ঘটনার প্রেক্ষাপট: নিহত যুবকের নাম জুয়েল শেখ (২১), বাড়ি মুর্শিদাবাদের সুতি থানার চকবাহাদুরপুর এলাকায়। রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গত ২০ ডিসেম্বর তিনি সম্বলপুরে গিয়েছিলেন। বুধবার রাতে যখন তাঁরা ঘরে রান্না করছিলেন, অভিযোগ সেই সময় একদল দুষ্কৃতী ঘরে ঢুকে তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে। হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় জুয়েলের। জুয়েলের পরিবারের দাবি, তাঁদের একমাত্র সন্তানকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।
তৃণমূলের তীব্র আক্রমণ: বৃহস্পতিবার বড়দিনের সকালে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বিজেপিকে ‘বাংলাবিরোধী’ ও ‘সংবিধানবিরোধী’ বলে আক্রমণ করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “বাংলা ভাষায় কথা বলা কি এখন অপরাধ? বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে কেন বাঙালিদের টার্গেট করা হচ্ছে?” প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক সভার স্লোগান ‘বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই’ প্রসঙ্গ টেনে শশী পাঁজা দাবি করেন, এটি আসলে একটি হুমকি—অর্থাৎ বিজেপি না করলে কি বেঁচে থাকার অধিকার নেই?
পুলিশের দাবি ও বর্তমান পরিস্থিতি: অন্যদিকে, ওড়িশা পুলিশ বিষয়টি কিছুটা ভিন্নভাবে দেখছে। ওড়িশা পুলিশের আইজি হিমাংশু কুমার লাল জানিয়েছেন, বিড়ি চাওয়াকে কেন্দ্র করে বচসা থেকেই এই গণ্ডগোলের সূত্রপাত। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে মুর্শিদাবাদের সুতি এলাকায় এখন শোকের ছায়া। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার অমিত কুমার সাউ জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাংলার শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে ফের একবার বড়সড় প্রশ্ন চিহ্ন খাড়া করল এই ঘটনা।