ছাত্রনেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ওপার বাংলায় যে নজিরবিহীন হিংসা শুরু হয়েছে, তা নিয়ে এবার সরাসরি ময়দানে নামল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া তাণ্ডব, সংবাদমাধ্যমের দপ্তরে অগ্নিসংযোগ এবং ভারত-বিরোধী স্লোগান ঘিরে মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছে শেখ হাসিনার দল।
আওয়ামী লীগের সোশ্যাল মিডিয়া যুদ্ধ
বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাংলাদেশ যখন জ্বলছে, তখন নিজেদের অফিসিয়াল ফেসবুক হ্যান্ডেল থেকে একের পর এক ভিডিও পোস্ট করে ইউনূস সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে আওয়ামী লীগ। তাদের প্রধান অভিযোগগুলো হলো:
-
মবের রাজত্ব: ভাঙচুরের একটি ভিডিও পোস্ট করে আওয়ামী লীগ লিখেছে, “এই লুটপাট আর মবের রাজ্য কায়েম করেছে ইউনূস, এনসিপি আর জঙ্গি গোষ্ঠী। এদেরকেও কি দায়মুক্তি দেবে ইউনূস?”
-
সংবাদমাধ্যমে হামলা: ‘প্রথম আলো’ এবং ‘ডেইলি স্টার’-এর অফিসে আগুনের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তারা একে ‘জামাত-শিবিরের গুপ্ত রাজনীতির ফলাফল’ বলে দাবি করেছে।
-
বাকরুদ্ধ দেশ: ডেইলি স্টারের সম্পাদক নুরুল কবিরের ওপর হামলার ভিডিও পোস্ট করে দলটির দাবি, দেশ আজ বাকরুদ্ধ এবং এর পেছনে রয়েছে উগ্রপন্থীরা।
অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দু
হাদি খুনের নেপথ্যে কে? এই প্রশ্নেই এখন বিভক্ত বাংলাদেশ। হাদির অনুগামীদের একাংশের দাবি, ফয়সাল করিম নামে এক আওয়ামী লীগ সমর্থকই হাদিকে গুলি করেছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ ফয়সালের বাবা, মা, স্ত্রী ও বন্ধুদের গ্রেফতার করেছে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই অভিযোগকে সাজানো এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
নিশানায় ভারত ও উগ্রপন্থীদের স্লোগান
জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশে যে ভারত-বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে, হাদির মৃত্যু তাকে আরও উসকে দিয়েছে। চরমপন্থীদের একটি অংশ দাবি করছে হাদির মৃত্যুর পেছনে ভারতের হাত রয়েছে। এই অজুহাতে:
-
ভারতীয় হাই কমিশনের বাইরে দফায় দফায় বিক্ষোভ চলছে।
-
রাজপথে ভারত-বিরোধী কুরুচিকর স্লোগান তোলা হচ্ছে।
-
ভারতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিশানা করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এক নজরে বর্তমান বাংলাদেশ:
-
রাজশাহী: শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবন ও আওয়ামী লীগ অফিসে অগ্নিসংযোগ।
-
ঢাকা: প্রধান দুটি সংবাদমাধ্যমের কার্যক্রম পুরোপুরি স্তব্ধ।
-
চট্টগ্রাম ও সিলেট: বিভিন্ন সরকারি ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর।
রাজনৈতিক মহলের মতে, আওয়ামী লীগের এই ‘কামব্যাক’ পোস্টগুলো প্রমাণ করছে যে তারা এই অরাজক পরিস্থিতির ফায়দা তুলে জনমত নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে বাংলাদেশ বড় ধরনের গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।