নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা যাচাই বা SIR প্রক্রিয়া শুরু হতেই একের পর এক হাড়হিম করা তথ্য সামনে আসছে। এবার পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট ব্লকের শীতলগ্রামে ধরা পড়ল এক অবিশ্বাস্য ‘লজিক্যাল এরর’। ভোটার তালিকায় দেখা যাচ্ছে, বাবার বয়স ৬৩ বছর আর তাঁর দুই ছেলের বয়স যথাক্রমে ৫৯ ও ৫৮ বছর! অর্থাৎ খাতায়-কলমে মাত্র ৫ বছর বয়সেই দুই সন্তানের পিতা হয়েছেন ওই ব্যক্তি।
কীভাবে সম্ভব এই আজব ঘটনা? তদন্তে নামতেই প্রশাসনের সামনে উঠে এল বিস্ফোরক সত্য। জানা গিয়েছে, শীতলগ্রামের ১৭৫ নম্বর বুথের ভোটার সরোজ মাঝিকে (৬৩) বাবা সাজিয়ে নাম তোলা হয়েছিল লক্ষ্মী মাঝি (৫৯) ও সাগর মাঝির (৫৮)। কিন্তু এনুমারেশন ফর্ম পরীক্ষা করতেই দেখা যায়, বাবা ও ছেলের বয়সের ব্যবধান মাত্র কয়েক বছরের। এরপরই জিজ্ঞাসাবাদের মুখে আসল সত্যি কবুল করে ওই পরিবার।
‘নকল বাবা’ ও অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার: লক্ষ্মী মাঝির স্ত্রী রাজশ্রী মাঝি ক্যামেরার সামনে স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা আসলে বাংলাদেশের বাসিন্দা। ২০০৬ সালে কাজ ও আশ্রয়ের খোঁজে তাঁরা ওপার বাংলা থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে মঙ্গলকোটে আসেন। তৎকালীন রাজনৈতিক প্রভাবে স্থানীয় বাসিন্দা সরোজ মাঝিকে ‘নকল বাবা’ সাজিয়ে আধার ও ভোটার কার্ড তৈরি করা হয়। রাজশ্রীর কাতর আবেদন, “আমাদের মেরে ফেলুন, কিন্তু বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবেন না।”
“আমি আর ছেলে চাই না!” অভিযুক্ত ‘নকল বাবা’ সরোজ মাঝি স্পষ্ট জানিয়েছেন, “ওরা আমার ছেলে নয়। বাম জমানায় নেতাদের কথায় রাজি হয়েছিলাম। এখন এই ঝামেলা আর চাই না।” প্রশাসন সূত্রে খবর, এটি একটি গুরুতর জালিয়াতি। অভিযুক্তদের শুনানিতে (Hearing) ডাকা হবে। সঠিক নথিপত্র না দেখাতে পারলে বাতিল হবে নাগরিকত্ব এবং আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর: এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আসরে নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলো।
-
তৃণমূলের দাবি: বাম আমলে ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অনুপ্রবেশকারীদের নাম তোলা হয়েছিল।
-
বিজেপির কটাক্ষ: বামেরা যে পথে হেঁটেছে, তৃণমূলও এখন সেই পথেই ভোটব্যাঙ্ক রক্ষা করছে।
-
সিপিআইএম-এর সাফাই: সেই সময় এনুমারেশন ফর্মে স্থানীয়রা যা দিয়েছিল, তাই নথিভুক্ত হয়েছিল। দলগতভাবে কেউ জড়িত নয়।
ভোটার তালিকায় এই বিপুল গরমিল এখন জেলা প্রশাসনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা রাজ্যে এমন আরও কত ‘৫ বছরের বাবা’ লুকিয়ে আছে, এখন সেটাই বড় প্রশ্ন।