কলকাতা বিমানবন্দরে IndiGo-র চরম বিশৃঙ্খলা, ৪৭টি ফ্লাইট বাতিল, যাত্রী ভোগান্তি চরমে

ইন্ডিগোর (IndiGo) বিমান পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার সমস্যা গত দু’দিনের তুলনায় শুক্রবার আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দিল্লির পর এবার কলকাতা বিমানবন্দরেও একে একে ফ্লাইট বাতিল করছে এই সংস্থা। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ৪৭টি ইন্ডিগোর ফ্লাইট কলকাতা থেকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।

বাতিল হওয়া বিমানগুলির মধ্যে রয়েছে মুম্বই, চেন্নাই, দিল্লি, বাগডোগরা, আইজল, পটনা, হায়দরাবাদ-সহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরের উড়ান। দৈনন্দিন যাতায়াত, জরুরি সফর ও অফিসের কাজে যাঁদের বিমানে ওঠার কথা ছিল, তথ্যের অভাব ও বিকল্প ব্যবস্থার অনিশ্চয়তায় তাঁদের একরকম দিশেহারা অবস্থা।

বিমানবন্দরের চিত্র:

  • শুক্রবার দুপুরে টার্মিনালের আগমনী বোর্ডে দেখা যায়, বেঙ্গালুরু থেকে আসা একাধিক বিমান (6E 0576, 6E 0952 ও 6E 6516) অনেক দেরিতে নামবে।

  • ভুবনেশ্বর, আমেদাবাদ ও নাগপুর থেকে আসা তিনটি বিমান সম্পূর্ণ বাতিল।

  • হায়দরাবাদ থেকে আসা ফ্লাইট 6E 0654-ও দেরিতে।

  • যাত্রীদের হাতে বোর্ডিং পাস থাকলেও গন্তব্যে পৌঁছনো এখন অনিশ্চিত। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা মাটিতে বসে সময় কাটাচ্ছেন, কেউ বা ফোনে রি-শিডিউলের চেষ্টা করছেন।

ইন্ডিগোর ব্যাখ্যা ও যাত্রীদের ক্ষোভ:

ইন্ডিগোর পক্ষ থেকে ক্রু-সংকট ও অপারেশনাল সমস্যাকেই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হয়েছে। যাত্রীদের প্রশ্ন, “আগে থেকে কেন সতর্ক করা হলো না?” টানা চার দিন ধরে একই পরিস্থিতি বজায় থাকায় যাত্রীদের আস্থাও নড়বড়ে হচ্ছে। ভিড় ও উত্তেজনা সামাল দিতে কলকাতা বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

মন্ত্রকের কড়া নির্দেশ:

চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে ইন্ডিগোর উড়ান পরিষেবা আচমকা ভেঙে পড়ায় চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে দেশের বিমানবন্দরগুলিতে। এর মূল কারণ হলো: নতুন নিয়মে পাইলটদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের সময় দিতে হচ্ছে, কিন্তু এয়ারলাইন্সের কাছে যথেষ্ট সংখ্যক পাইলট ও ক্রু মেম্বার নেই।

এই চরম যাত্রী ভোগান্তির কথা ভেবেই আজ দুপুর নাগাদ অসামরিক বিমান ও পরিবহণ মন্ত্রক ইন্ডিগোকে জরুরি ভিত্তিতে পরিষেবা সচল করার নির্দেশ জারি করে:

  • আজ রাতের মধ্যেই বিমান পরিষেবা স্বাভাবিক, অর্থাৎ নির্ধারিত সূচি মেনে চালাতে হবে।

  • আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ পরিষেবা স্বাভাবিক করতে হবে।

  • বিমান বাতিলের ক্ষেত্রে টিকিটের সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা নিশ্চিত করতে হবে।

  • যাত্রীরা আটকে গেলে বিমান সংস্থাকেই হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

  • দেরিতে ছাড়া ফ্লাইটের যাত্রীদের জলখাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করতে হবে।

  • বয়স্ক নাগরিকরা যাতে কোনওভাবে অস্বস্তিতে না-পড়েন, সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।

  • মন্ত্রকের তরফে ২৪ ঘণ্টার একটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাতিলের সংখ্যা ৪৭-এ দাঁড়িয়েছে, এবং দেরির তালিকা ক্রমশ বড় হচ্ছে। যাত্রীরা এখন পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার প্রতীক্ষায় দিশেহারা।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy