কলকাতার মুচিপাড়ায় এক ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় অবশেষে মৃতের স্ত্রী সর্বাণী দাসকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ। সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিবাদের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশি জেরায় স্বীকার করেছেন সর্বাণী।
যা জানাচ্ছে পুলিশ:
পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার গভীর রাতে মুচিপাড়ার বাড়ি থেকে ৪৮ বছর বয়সী অশোককুমার দাসের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর শরীরে একাধিক ক্ষতের চিহ্ন ছিল। কোনো অভিযোগ না পাওয়া গেলেও পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। বৃহস্পতিবার মৃতের স্ত্রীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে মুচিপাড়া থানার পুলিশ।
তদন্তে উঠে এসেছে, অশোক এবং তাঁর স্ত্রী সর্বাণী দাসের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চলছিল। অশোক ফ্ল্যাট বিক্রি করতে চাইছিলেন, কিন্তু সর্বাণী তার ঘোর বিরোধী ছিলেন।
ছুরিকাঘাতের মুহূর্ত:
পুলিশি জেরায় সর্বাণী স্বীকার করেছেন, মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদ ফ্ল্যাট বিক্রির নথিপত্র খুঁজতে অশোক বাড়িতে আসেন। সেই সময়ই দু’জনের মধ্যে তীব্র অশান্তি শুরু হয়। সর্বাণী পুলিশকে জানিয়েছেন—তিনি রান্নাঘর থেকে ছুরি নিয়ে এসে অশোককে ভয় দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তর্কাতর্কির মধ্যেই ছুরিটি অশোকের বুকে ঢুকে যায়।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, অশোকের বুকের ক্ষত প্রায় ১.৫ ইঞ্চি গভীর ছিল এবং ছুরিটি সরাসরি তাঁর ফুসফুসে আঘাত করে।
মিথ্যা বলার চেষ্টা ও প্রমাণ:
-
নার্সিংহোমে দাবি: সর্বাণী এবং তাঁর ছেলে অশোককে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেখানে সর্বাণী দাবি করেছিলেন যে অশোক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। কিন্তু চিকিৎসক বুকের গভীর ক্ষত দেখে তাঁকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন এবং মুচিপাড়া থানায় খবর দেন।
-
সিসিটিভি ফুটেজ: পুলিশ সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে ১১টা ৫৫ মিনিটের মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছিল। অশোকের বাড়ির বাইরের রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা নিশ্চিত হন যে ওই সময়ে বাড়িতে বাইরের কেউ ঢোকেনি বা বাড়ি থেকে কেউ বেরিয়ে যাননি।
-
অসঙ্গতি: সর্বাণীর ‘দুর্ঘটনার’ দাবি সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে মেলেনি। কারণ, ওই সময় অশোককে অক্ষত অবস্থায় বাড়িতে ঢুকতে দেখা গিয়েছে। ঘটনাস্থল ও পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণের সঙ্গে মহিলার বক্তব্যের একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়ে।
সিসিটিভি ফুটেজ এবং তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে চাপের মুখে সব স্বীকার করেন সর্বাণী দাস। এরপরই তাঁকে গ্রেফতার করেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের ঘটনায় আরও তথ্য জানতে সর্বাণী দাসকে জেরা করা হচ্ছে।