১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে সংঘাত চরমে উঠল বৃহস্পতিবার। যেখানে তৃণমূল সাংসদরা বাংলাকে এই খাতে বকেয়া ৪৩,০০০ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে না বলে প্রতিদিন সংসদে সরব হচ্ছেন, সেখানে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এবং কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী কমলেশ পাসোয়ান পাল্টা আক্রমণে গেলেন। প্রতিমন্ত্রী কমলেশ পাসোয়ান দাবি করেছেন, বাংলার বকেয়া অর্থের পরিমাণ মাত্র ৩,০৮২ কোটি টাকা।
এই আবহে এদিন রাজ্যসভায় ‘মনরেগা’ প্রকল্প নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তাঁর দাবি, “বাংলাকে প্রচুর টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়ম মেনে মনরেগা প্রকল্পের কাজ করেনি।”
অনিয়মের প্রমাণ দিল রাজ্যের রিপোর্টই!
কীভাবে রাজ্যে অনিয়ম হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নির্মলা বলেন, “কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মেনে কাজ না করার জন্য ২০২২ সাল থেকে বাংলার টাকা আটকে রাখা হয়েছে।” তাঁর সবচেয়ে বড় দাবি, এই বছরের জুলাইয়ে সর্বশেষ অ্যাকশন টেকেন রিপোর্টে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিজেই জানিয়েছে যে কেন্দ্রীয় সমীক্ষক দল ৪ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা (তথ্য অনুযায়ী $৪.৮১ কোটি টাকা) উদ্ধার করেছে।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, “চারটি জেলা থেকে এই টাকা উদ্ধার হয়েছে। এই রিপোর্টই বলে দিচ্ছে রাজ্যে মনরেগা-র টাকার অপব্যবহার হয়েছে।” তিনি জানান, নভেম্বর মাসেও রাজ্য সরকারকে নতুন করে অ্যাকশন রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। তিনি স্পষ্ট জানান, ২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত রাজ্যকে ৫৪,৪১৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে, যা প্রমাণ করে বাংলা বঞ্চনার শিকার হয়নি।
‘তৃণমূল বাংলার উন্নয়নকে প্রতিহত করছে’
এরপরেই অর্থমন্ত্রী বাংলার শিল্পায়ন প্রসঙ্গে অভিযোগ তুলে বলেন, “রাজ্যকে নিয়মিত প্রাপ্য সেস দিচ্ছে কেন্দ্র। তার পরেও বঞ্চনার অভিযোগ আসছে।” শিল্পে রাজ্যের পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে নির্মলা বলেন, “এই সরকার কোনও দিন বাংলাকে বঞ্চনা করেনি। প্রকৃত সত্য হলো, তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার উন্নয়নকে প্রতিহত করছে।”
তিনি আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গ আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে এবং রাজ্য থেকে একের পর এক শিল্প সরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশের শিল্পায়ন ও জিডিপি-তে বাংলার অবদান ছিল ২৭ শতাংশ, যা এখন কমে মাত্র ৩ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।
ওয়েলে নেমে তৃণমূলের বিক্ষোভ
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে সঙ্গে সঙ্গেই উত্তাল হয় রাজ্যসভা। রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের নেতৃত্বে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল সাংসদ দোলা সেন, সাগরিকা ঘোষ এবং অন্যান্যরা। নির্মলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডেরেক ‘পয়েন্ট অফ অর্ডার’ তুলে বক্তব্য রাখার দাবি জানান, কিন্তু চেয়ারম্যান অনুমতি দেননি।
তৃণমূল সাংসদরা অভিযোগ করেন, অর্থমন্ত্রী সংসদের উচ্চকক্ষকে বিভ্রান্ত করছেন এবং মিথ্যে কথা বলছেন। “সদন মে ফিনান্স মিনিস্টার কি অসত্য ভাষণ, ধিক্কার ধিক্কার” বলে স্লোগান তোলেন তাঁরা। ডেরেক চিৎকার করে বলতে থাকেন, “গণতন্ত্রকে খুন করা হচ্ছে। বাংলাকে বঞ্চনা করা হচ্ছে।” এরপরেই তৃণমূল সাংসদরা ওয়াকআউট করেন। তাদের সমর্থন জানান আম আদমি পার্টি, সিপিআই এবং সিপিএম-এর সাংসদরাও।
তৃণমূল সূত্রের খবর, অর্থমন্ত্রীর ‘মিথ্যাচার’-এর প্রতিবাদে দলীয় সাংসদরা রাজ্যসভার চেয়ারম্যানকে চিঠি লিখবেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের (Privilege) নোটিস আনার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে।