ক্রিকেট রিপোর্ট, অ্যাশেজ ২০২৫-২৬: অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অ্যাশেজে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের শেষে চালকের আসনে বসালেন জো রুট। যদিও অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ক ৬ উইকেট নিয়ে দিনের শুরুতে ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন, রুটের মহাকাব্যিক ইনিংসের সামনে তা ম্লান হয়ে যায়।
দিনের শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ৯ উইকেটে ৩২৫ রান। জো রুট অপরাজিত রইলেন ১৩৫ রানে, যা অস্ট্রেলিয়ায় ১৫টি অ্যাশেজ টেস্টের পর তাঁর প্রথম শতরান। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেন ১১ নম্বরে নামা জোফ্রা আর্চার (৩২*), যিনি শেষ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৬১ রানের পার্টনারশিপ গড়ে অস্ট্রেলিয়ার হাতে প্রথম দিনের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে দেননি।
স্টার্কের নতুন বিশ্বরেকর্ড
দিনের তৃতীয় ওভারেই মিচেল স্টার্ক বেন ডাকেট এবং ওলি পোপকে দ্রুত ফিরিয়ে দিয়ে ইংল্যান্ডকে ৫/২ করে দেন। কিন্তু এরপরই স্টার্ক আরও একটি মাইলফলক ছুঁয়ে যান।
-
হ্যারি ব্রুককে আউট করার সঙ্গে সঙ্গেই স্টার্কের টেস্ট উইকেটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪১৫টি।
-
তিনি পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আক্রমকে (১০৪ টেস্টে ৪১৪ উইকেট) ছাড়িয়ে টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে সফল বাঁহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে বিশ্বরেকর্ড গড়েন।
স্টার্ক অবশ্য বিনয়ের সঙ্গে ওয়াসিমকে “বাঁহাতিদের শিখর” বলে উল্লেখ করেন এবং জানান, তিনি কেবল পারফর্ম করে যেতে চান।
রুটের দৃঢ়তা ও ক্রলির পাল্টা আক্রমণ
পের্থে আট উইকেটে হারের পর রুটের এই ইনিংস দলের মনোবল ফিরিয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শূন্য রানে ২ উইকেট হারানোর পর রুট ক্রিজে আসেন।
-
তিনি জ্যাক ক্রলির সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ১১৭ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলের ইনিংস সামাল দেন।
-
ওপেনার জ্যাক ক্রলি (৯৩ বলে ৭৬ রান), যিনি পের্থে দু’টি শূন্য করেছিলেন, রুটের চেয়ে দ্রুত গতিতে রান করছিলেন। যদিও প্রথম বিরতির পরেই তিনি একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী পুল শট খেলতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
রুট তাঁর ১৫টি অস্ট্রেলিয়ান অ্যাশেজ টেস্টে সর্বোচ্চ ৮৯ রানের মাইলফলকটি অতিক্রম করে যান। নাইট সেশনের মাঝখানে ড্রিঙ্কস বিরতির সময় তিনি ৮৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। ব্রেকথ্রুর পর ব্রেন্ডন ডগেটের বলে বাউন্ডারি মেরে তিনি ৯০-এর ঘরে প্রবেশ করেন এবং পরের বলেই আরও একটি বাউন্ডারি মেরে ৯৬-এ পৌঁছে যান।
অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যাশাভঙ্গ
দিনের প্রথম দুই সেশনে কিছুটা ভারসাম্য ছিল, যেখানে ইংল্যান্ড ৯৮ রান করে এবং অস্ট্রেলিয়া দু’টি করে উইকেট নেয়। তবে নাইট সেশনের মাঝামাঝি জশ ইংলিসের একটি দারুণ রানআউটে বেন স্টোকস (১৯) ফিরে গেলে অস্ট্রেলিয়া খেলায় ফেরে। এরপর স্কট বোল্যান্ড জেসন স্মিথকে শূন্য রানে আউট করলে স্কোর দাঁড়ায় ২১১/৬।
স্টার্ক এরপর দ্রুত উইল জ্যাকস (৪০), গুস অ্যাটকিনসন এবং ব্রাইডন কার্সকে তুলে নিলে ইংল্যান্ড একসময় ২৬৪/৯ হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শুরু করার প্রত্যাশা থাকলেও, রুট এবং আর্চারের শেষ উইকেটে দুর্দান্ত ব্যাটিং সেই প্রত্যাশা নষ্ট করে দেয়।
স্টার্ক (৬/৭১) দিনটিকে সমানে সমান বলে মনে করলেও, রুটের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করেন: “দিনের শেষ পার্টনারশিপটিকে বাদ দিলে, আমরা বলতে পারতাম এটি বোলিংয়ের জন্য একটি দুর্দান্ত দিন ছিল। জো দিনভর সত্যিই দারুণ ব্যাটিং করেছে।”
বিতর্কিত একাদশ
সিরিজের সবচেয়ে বিতর্কিত নির্বাচন ছিল অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণে স্পিনার নাথান লিয়নের পরিবর্তে নেসারকে ফেরানো। লিয়ন (৩৮), যিনি তার ১৪০ টেস্ট কেরিয়ারে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে মাত্র দ্বিতীয়বার বাদ পড়লেন, এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচক কমিটি এটিকে “গাব্বার অবস্থার কারণে এককালীন সিদ্ধান্ত” বলে বর্ণনা করলেও লিয়ন এই কৌশলগত সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন।