ট্রাম্প প্রশাসন তার “আমেরিকা ফার্স্ট” অভিবাসন নীতির কঠোর প্রয়োগ ঘটাতে এবার H-1B ভিসা আবেদনকারীদের জন্য একটি ব্যাপক নতুন যাচাইকরণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই পদক্ষেপের প্রধান লক্ষ্য ভারতীয় প্রযুক্তি কর্মীরা, কারণ এই ভিসার সিংহভাগ আবেদনকারীই ভারত থেকে আসেন।
২ ডিসেম্বর স্টেট ডিপার্টমেন্টের জারি করা একটি নির্দেশিকা অনুযায়ী, এখন থেকে কনস্যুলার অফিসাররা H-1B আবেদনকারীদের LinkedIn প্রোফাইল, জীবনবৃত্তান্ত (résumés) এবং এমনকি সঙ্গী H-4 পরিবারের সদস্যদের ডিজিটাল ইতিহাসও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখবেন।
কড়া যাচাইয়ের নতুন নিয়ম
নতুন নির্দেশিকায় বিশেষভাবে এমন আবেদনকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে যাদের পূর্ববর্তী কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা ভুল তথ্য (misinformation), মিথ্যা তথ্য (disinformation), কনটেন্ট মডারেশন, ফ্যাক্ট-চেকিং, কমপ্লায়েন্স বা অনলাইন নিরাপত্তা-এর মতো ক্ষেত্রে রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এখন এই কাজগুলিকে সম্ভাব্য “সেন্সরশিপ” হুমকির সঙ্গে যুক্ত করছে।
কোনো অফিসার যদি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে একজন আবেদনকারী “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুরক্ষিত মতপ্রকাশের সেন্সরশিপের জন্য দায়ী, বা তাতে জড়িত ছিলেন”, তবে অভিবাসন ও জাতীয়তা আইন (Immigration and Nationality Act) অনুযায়ী তাদের ভিসা অযোগ্য ঘোষণা করা হতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়া উন্মুক্ত করার নির্দেশ
সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি এসেছে সোশ্যাল মিডিয়া সংক্রান্ত নিয়মে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নির্দেশ অনুসারে, H-1B, H-4, F, M, এবং J ভিসার সমস্ত আবেদনকারীকে তাদের প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট “পাবলিক” করতে হবে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে এই নিয়মটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হবে।
এই নতুন প্রয়োজনীয়তা কনস্যুলার অফিসারদের প্ল্যাটফর্ম জুড়ে আবেদনকারীদের পোস্ট, মিথস্ক্রিয়া, সম্পর্ক এবং নেটওয়ার্কগুলিতে সীমাহীন অ্যাক্সেস দেবে। এটি ঐতিহ্যগতভাবে নথি-ভিত্তিক ভিসা মূল্যায়নের থেকে সরে এসে আদর্শগত এবং আচরণ-ভিত্তিক যাচাইয়ের দিকে একটি বড় পরিবর্তন।
ভারতীয়দের উপর চরম প্রভাব
H-1B প্রতিভার একক বৃহত্তম উৎস হওয়ায় ভারতীয়রাই এই নতুন নিয়মের সবচেয়ে বেশি শিকার হবেন। এর ফলে:
-
বিলম্ব ও প্রত্যাখ্যান বৃদ্ধি: ভিসা প্রক্রিয়াকরণে অস্বাভাবিক বিলম্ব এবং প্রত্যাখ্যানের হার বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
-
কর্মজীবনের ঝুঁকি: কনটেন্ট মডারেশন, ট্রাস্ট অ্যান্ড সেফটি বা কমপ্লায়েন্সে কাজ করা ভারতীয় আবেদনকারীরা এখন বড় ঝুঁকির সম্মুখীন। এমনকি আউটসোর্সড ফ্যাক্ট-চেকিং-এর মতো পরোক্ষ কাজের সাথে জড়িত থাকলেও অযোগ্যতা আসতে পারে।
-
পারিবারিক গোপনীয়তা লঙ্ঘন: H-4 ভিসার অধীনে থাকা স্ত্রী ও সন্তানদেরও তাদের সম্পূর্ণ সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতি মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে উন্মুক্ত করতে হবে, যা বিশেষ করে মহিলাদের ডিজিটাল স্বায়ত্তশাসনের উপর নজিরবিহীন আঘাত।
এর ব্যাপক পরিণতি হিসেবে, ভারতীয় প্রযুক্তি কর্মীরা ভিসা জটিলতা এড়াতে অনলাইনে তাদের আচরণ স্ব-সেন্সর করতে বা প্ল্যাটফর্ম থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করতে বাধ্য হতে পারেন। অন্যদিকে, ভারতীয় প্রতিভার উপর নির্ভরশীল মার্কিন কোম্পানিগুলো কর্মীদের নিয়োগে বাধা ও STEM কর্মীদের অনবোর্ডিংয়ে বিলম্বের সম্মুখীন হতে চলেছে।