যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের জেরে পাকিস্তানের রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে, যা দেশটির রেকর্ড-উচ্চ বেকারত্বকে আরও গভীর সংকটে ফেলবে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। নতুন শ্রম জরিপ অনুসারে, গত ২১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারত্বের মুখে দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তান। বিশেষত, রপ্তানিনির্ভর প্রধান খাতগুলো এখন নতুন করে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঝুঁকিতে।
রেকর্ড উচ্চ বেকারত্ব
-
বেকারত্বের হার: সদ্য প্রকাশিত ২০২৪-২৫ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, পাকিস্তানে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৭.১ শতাংশে, যা ২০০৩-০৪ সালের (৭.৭%) পর সর্বোচ্চ।
-
বেকার সংখ্যা: দেশের মোট শ্রমশক্তি ৮ কোটি ৩১ লাখের মধ্যে ৫৯ লাখ মানুষ বেকার।
-
শিক্ষিত বেকার: বেকারদের তিন-চতুর্থাংশই শিক্ষিত, যার মধ্যে প্রায় ১০ লাখ স্নাতক ডিগ্রিধারী রয়েছেন।
সেন্ট অলাফ কলেজের অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক নাফি সারদারের মতে, বেকারত্ব বাড়ার মূল কারণ হলো বিনিয়োগের দীর্ঘমেয়াদি পতন। পাকিস্তানের বিনিয়োগ-জিডিপি অনুপাত দুই দশক ধরে কমছে, যা এখন প্রায় ১৪ শতাংশের কাছাকাছি (২০০০ সালের শুরুতে যা ছিল ১৮ শতাংশ)।
ইসলামাবাদের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজের অধ্যাপক তাহির নঈম মালিক বলেন, পাকিস্তানে এখন উৎপাদন খাত কার্যত নেই বললেই চলে। ব্যবসা করার অত্যন্ত বেশি খরচ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে।
ট্রাম্পের শুল্ক: অর্থনীতির উপর আঘাত
গত আগস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে প্রায় দ্বিগুণ করে ১৯ শতাংশ আরোপের ঘোষণা দেন।
-
রপ্তানি নির্ভরশীলতা: পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ ৫.৫ বিলিয়ন ডলার, যা দেশটির মোট রপ্তানির প্রায় ১৮ শতাংশ।
-
রপ্তানি হ্রাসের আশঙ্কা: সার্ক চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানি টেক্সটাইল ও পোশাক পণ্যের দাম বেড়েছে, যা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত রপ্তানি কমার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
-
আর্থিক ক্ষতি: ডেটা দারবারের মুতাহের খানের হিসাব অনুযায়ী, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে পাকিস্তানের প্রায় ১.১৪ বিলিয়ন ডলার বা ১১৪ কোটি ডলারের রপ্তানি ক্ষতি হতে পারে।
চাকরি হারানোর গুরুতর ঝুঁকি
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমলে পাকিস্তানে বেকারত্ব আরও বাড়বে।
-
ছাঁটাইয়ের ঝুঁকি: সেন্ট অলাফ কলেজের সারদার বলেন, শুল্কের কারণে টেক্সটাইল ও পোশাকের মতো শ্রমঘন খাতগুলিতে অর্ডারের সামান্য কমলেই উৎপাদন কাটছাঁট ও ছাঁটাই অনিবার্য।
-
চাকরি হারানো: মুতাহের খানের মতে, যদি চাহিদা ৩০ শতাংশ কমে এবং তার অনুপাতিক প্রভাব পড়ে, তাহলে পাকিস্তানে প্রায় ৬ লাখ চাকরি ঝুঁকির মুখে পড়বে।
-
দুষ্টচক্র: স্বতন্ত্র অর্থনীতিবিদ নিয়াজ মুর্তাজা বলেন, রপ্তানি কমে চাকরি হারানোর ফলে ভোগ ব্যয় কমবে, যা আবার বিনিয়োগ ও চাকরি সৃষ্টির গতি ধীর করে একটি ‘দুষ্টচক্র’ তৈরি করবে।
বিশেষজ্ঞরা পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে এবং অর্থনীতির বৈচিত্র্য আনতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।