ভারতের ভূমিকম্প প্রবণ এলাকাগুলির একটি সংশোধিত ও গুরুত্বপূর্ণ মানচিত্র সম্প্রতি প্রকাশ করেছে ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (BIS)। ভূমিকম্পের ঝুঁকি মূল্যায়নে এটি অন্যতম বড় পরিবর্তন। এই সংশোধিত সিসমিক জোনের মানচিত্রে প্রথমবারের মতো পুরো হিমালয় অঞ্চলকেই সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ভূমিকম্প প্রবণ জোনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই নতুন মানচিত্র অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৬১ শতাংশ অংশ এখন মাঝারি থেকে উচ্চ ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় (জোন ৪ থেকে ৬) পড়ছে।
হিমালয় কেন সর্বোচ্চ বিপদসীমার মধ্যে?
আগে হিমালয় অঞ্চলকে জোন ৪ এবং জোন ৫-এর মধ্যে ভাগ করা হলেও, এখন ঝুঁকিকে একীভূত করা হয়েছে। এর প্রধান কারণ হল, হিমালয় অঞ্চলটি পৃথিবীর সবচেয়ে সক্রিয় টেকটনিক সংঘর্ষ অঞ্চলের উপর অবস্থিত।
-
প্লেট সংঘর্ষ: ভারতী প্লেট প্রতি বছর প্রায় ৫ সেন্টিমিটার বেগে উত্তরে এগিয়ে ইউরেশীয় প্লেটের মধ্যে ধাক্কা দিচ্ছে। এই প্রচণ্ড বলের কারণেই হিমালয় সৃষ্টি হয়েছে এবং এখনও ধীরে ধীরে উঁচু হচ্ছে।
-
ঝুঁকি বৃদ্ধি: এই সংঘর্ষ ভূপৃষ্ঠে বিশাল চাপ তৈরি করে এবং এই চাপ হঠাৎ মুক্তি পেলেই শক্তিশালী ভূমিকম্প ঘটে। পুরনো মানচিত্রে মধ্য হিমালয়ের মতো যে ফল্ট সেগমেন্টগুলো দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল, সেগুলোর বিপদকেও এখন যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আপনার এলাকা কোন জোনে?
নয়া মানচিত্র অনুযায়ী, ভারতকে মোট ৫টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। তবে কোন জোন কতটা ভূমিকম্প প্রবণ তা বোঝাতে ২ থেকে ৬ পর্যন্ত ক্যাটাগরি ব্যবহার করা হয়েছে (জোন ২ সর্বনিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ, জোন ৬ সর্বোচ্চ)।
| ক্যাটাগরি (রং) | সিসমিক জোন | অন্তর্ভুক্ত প্রধান এলাকা |
| লাল | জোন ৬ (সর্বোচ্চ) | গ্যাংটক, জম্মু-কাশ্মীরের একাংশ, দেহরাদুন, উত্তর-পূর্ব ভারতের সবক’টি রাজ্য, আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। |
| কমলা | জোন ৫ | উত্তরপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলি (দেহরাদুন সর্বোচ্চ ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত)। |
| হাল্কা কমলা | জোন ৪ | কলকাতা এবং সংশ্লিষ্ট কিছু এলাকা। |
কলকাতা কি ঝুঁকিমুক্ত?
নতুন মানচিত্র অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটির রাজধানী কলকাতা কে হাল্কা কমলা রঙের জোন ৪ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। এর অর্থ হলো, কলকাতা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ‘রেড জোন’ (জোন ৬) বা ‘কমলা জোন’ (জোন ৫)-এ না থাকলেও, মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার মধ্যে রয়েছে।
নতুন মানচিত্রে বিশেষত দু’টি ভিন্ন জোনের সংযোগস্থলে থাকা শহরগুলিকে এখন উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জোনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই সতর্কতার কারণে উত্তরপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলির নির্মাণ ও নিরাপত্তা বিধিতে কঠোরতা আনা প্রয়োজন।