নির্বাচন কমিশনের বড় সংস্কার, এবার দেশজুড়ে পোলিং স্টেশনের পুনর্বিন্যাস, ভোটারদের ২ কিমি’র বেশি পথ পেরোতে হবে না

আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে সারা দেশের ভোটগ্রহণ কেন্দ্র বা পোলিং স্টেশন (Polling Station) পুনর্বিন্যাস নিয়ে বড় পদক্ষেপ নিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন (ECI)। ভোটারদের সুবিধা বাড়ানো, ভোটগ্রহণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং বিশেষত নগর এলাকায় ভোটকেন্দ্রের ঘাটতি ও ভিড় জনিত অস্বস্তি দূর করাই কমিশনের মূল লক্ষ্য।

কমিশনের নির্দেশিকা ও নিয়মাবলী

নির্বাচন কমিশন (ECI) এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত বিবৃতি জারি করেছে, যেখানে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে:

  • দূরত্ব হ্রাস: কোনো ভোটারকে যেন ২ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

  • বুথ বিভাজন: যে এলাকায় ১,২০০-র বেশি ভোটার রয়েছে, সেই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রকে (Polling Booth) ভেঙে নতুন করে দুই বা তার থেকে বেশি বুথ করা হবে।

  • স্থানের নিয়ম: বুথের ২০০ মিটারের মধ্যে রাজনৈতিক দলের অফিস থাকলে সেখানে ভোটকেন্দ্র বসানো যাবে না।

বেসরকারি আবাসনে ভোটকেন্দ্রের বিতর্ক

কমিশন এই পুনর্বিন্যাসের সময় যে এলাকায় ১,২০০-র বেশি ভোটার রয়েছে, সেখানে প্রাইভেট রেসিডেন্স বা আবাসনে (Private Residence) ভোটকেন্দ্র করা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখতে বলেছে।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি আবাসন কমপ্লেক্সের (Private Complex) ভিতরে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, বেসরকারি প্রাঙ্গণে ভোটকেন্দ্র বসালে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে এবং ‘সুবিধাভোগী’ বনাম ‘অসুবিধাভোগী’ – এই বিভাজন তৈরি হতে পারে। যদিও এরপরও ইসিআই বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে।

সারাদেশে ট্রায়াল ফর্মূলার প্রয়োগ

কমিশনের বক্তব্য, ১,২০০-র বেশি ভোটারযুক্ত বুথ ভেঙে নতুন কেন্দ্র তৈরির এই সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই কালিয়াগঞ্জ উপনির্বাচনে ট্রায়াল বেসিস করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক বিহার নির্বাচনেও এটি কার্যকর হয়। এবার সেই ফর্মূলা‌ই সারা দেশের জন্য চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

  • শহরাঞ্চলে নতুন সমীক্ষা: বড় শহর, গ্রুপ হাউজিং সোসাইটি এবং উচ্চ-আবাসিক এলাকার জন্য নতুন করে সমীক্ষা চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

  • পশ্চিমবঙ্গের সময়সীমা: পশ্চিমবঙ্গের সিইও-কে (West Bengal CEO) আলাদা চিঠি পাঠিয়ে কমিশন মনে করিয়েছে, আগামী ৪ ডিসেম্বর ২০২৫–এর মধ্যে জেলা আধিকারিকদের এই পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ করতে হবে।

কমিশনের লক্ষ্য স্পষ্ট: যেখানে মানুষ থাকে, ভোটকেন্দ্রও সেখানে পৌঁছক। স্বচ্ছ, সুবিধাজনক ও নিরাপদ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে এই প্রক্রিয়াকে কঠোর এবং পদ্ধতিগত করে তুলছে কমিশন।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy