ভারতের অর্থনীতি দ্রুত গতিতে এগোলেও দেশের মাথাপিছু গড় আয় (Per Capita Income) নিয়ে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। চলতি বছর মে মাসে এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে তথ্য জানিয়েছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সঞ্জীব সান্যাল। তিনি জানান, বর্তমানে ভারতের মাথাপিছু আয় প্রায় ৩,০০০ ডলার (Indian Rupees 2,50,000)।
গত কয়েক বছরের তুলনায় এই অঙ্ক অনেক বেশি হলেও, বিশ্বের বহু উন্নত দেশের তুলনায় তা এখনও অনেক কম। ভারত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে ‘উচ্চ আয়ের দেশ’ হওয়ার লক্ষ্যে, তবে এর পথে রয়েছে একাধিক চ্যালেঞ্জ।
‘কম্পাউন্ডিং এর জাদু’তে দ্রুত বৃদ্ধি
অর্থনীতিবিদ সঞ্জীব সান্যালের মতে, মাথাপিছু আয় বাড়াতে হলে আগে দেশের মোট জিডিপি (GDP) বাড়ানো জরুরি।
বিশাল লাফ: ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার সত্যিই নজরকাড়া। মাত্র চার বছরে ভারত ৩ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি হয়ে উঠেছে।
ধারাবাহিকতা: তাঁর মতে, গত ৩৫ বছর ধরে ধারাবাহিক বৃদ্ধির কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। অর্থনীতির ভাষায়, একে ‘কম্পাউন্ডিং এর জাদু’ বলা হয়।
বিশ্বকে টেক্কা: যখন জাপান বা জার্মানির মতো উন্নত দেশ ২% এরও কম হারে বাড়ছে, সেখানে ভারত ধারাবাহিকভাবে ৬% থেকে ৭% হারে বৃদ্ধি ধরে রেখেছে। এই গতি ধরে রাখতে পারলে আগামী ১৮ থেকে ২৪ মাসের মধ্যেই ভারতের অর্থনীতি আরও বড় হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন মাথাপিছু আয় বাড়ছে না?
সঞ্জীব সান্যালের মতে, ‘বেশি আয়ের দেশ হতে গেলে বিস্তৃত, শক্তিশালী অর্থনীতি থাকাটা জরুরি।’ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল মাথাপিছু আয় দিয়েই হিসেব করলে হবে না।
বৈষম্য: সমাজের আর্থিক বৈষম্য নিয়ন্ত্রণ করা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দ্রুত গতিতে জিডিপি বাড়লেও, সেই বৃদ্ধির সুফল সমাজের সব স্তরে সমানভাবে পৌঁছাচ্ছে না। উচ্চবিত্তদের আয় দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় গড় আয় বেড়ে দেখাচ্ছে, কিন্তু দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে এর প্রভাব কম। এই বৈষম্য নিয়ন্ত্রণে না এলে ‘উচ্চ আয়ের দেশ’ হওয়ার লক্ষ্য কেবল সংখ্যাতেই আটকে থাকবে।
সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ
ভারতের অর্থনীতির এই দ্রুত বৃদ্ধি সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু বাধা বিপত্তি চিন্তার কারণ। যেমন:
আন্তর্জাতিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা
ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি (Geo-political instability)
বাজারের অস্থিরতা
বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের নতুন প্রজন্মের সামনে যেমন চ্যালেঞ্জ প্রচুর, তেমনই বিরাট উন্নতির সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে মাথাপিছু আয় বাড়বে কি না, তা নির্ভর করছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির গতি, স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক বৈষম্য নিয়ন্ত্রণের কৌশলের উপর।