ট্রেনে এই ১০টি ভুল করলেই বিপদ! হতে পারে জরিমানা, জেল, এমনকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড!

ভারতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করেন। কিন্তু অনেকেই অজান্তে বা সামান্য অসতর্কতার কারণে এমন কিছু কাজ করে বসেন, যা রেলওয়ে আইনের চোখে গুরুতর অপরাধ। ১৯৮৯ সালের রেলওয়ে আইন অনুযায়ী, সামান্য ভুলও আপনার জন্য ভারী জরিমানা বা সরাসরি কারাদণ্ড ডেকে আনতে পারে।

যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেলওয়ে দুর্ব্যবহার, নিয়ম ভঙ্গ বা নিরাপত্তা নিয়ে খেলাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। নিচে এমন ১০টি ভুল তুলে ধরা হলো, যা ট্রেনে ভ্রমণের সময় যাত্রীদের এড়িয়ে চলা উচিত:

১. অপ্রয়োজনীয়ভাবে ট্রেনের চেইন টানা
আইন: রেলওয়ে আইনের ১৪১ ধারা।

অপ্রয়োজনীয়ভাবে চেইন টানা ট্রেনের নিরাপত্তা ও সময়সূচিকে প্রভাবিত করে। এই অপরাধের জন্য এক বছর পর্যন্ত জেল, জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

২. ট্রেনে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার
আইন: রেলওয়ে আইনের ১৬৪ এবং ১৬৫ ধারা।

এসি কোচের মোবাইল চার্জিং পয়েন্টে বৈদ্যুতিক কেটলি, হিটার, ইন্ডাকশন বা হিটিং রড ব্যবহার করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এটিকে ‘অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এর ফলে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

৩. চলন্ত ট্রেনে ওঠা বা নামা
আইন: রেলওয়ে আইনের ১৫৬ ধারা।

চলন্ত ট্রেন ধরা বা নামার চেষ্টা করা ‘অযত্ন এবং অবহেলার কাজ’ হিসেবে গণ্য হয়। এই অপরাধে ছয় মাসের জেল অথবা ১০০০ টাকা জরিমানা হতে পারে। এতে অন্য কারও ক্ষতি হলে শাস্তি আরও বাড়তে পারে।

৪. ট্রেনে ধূমপান
আইন: রেলওয়ে আইনের ১৬৭ ধারা।

ট্রেনে বা স্টেশন চত্বরে ধূমপান অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। এসি কোচে সিগারেট জ্বালালে তাৎক্ষণিক জরিমানা বা গ্রেফতারিও হতে পারে। বারবার অপরাধ করলে কারাদণ্ডও হতে পারে।

৫. রেললাইন বা সীমাবদ্ধ এলাকায় প্রবেশ
আইন: রেলওয়ে আইনের ১৪৭ ধারা।

অনুমতি ছাড়া রেলওয়ের সম্পত্তিতে প্রবেশ করা ‘অনুপ্রবেশ’ বলে গণ্য হয়। সেলফি বা ভিডিও করার জন্য রেললাইনে ওঠা সরাসরি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শাস্তি হতে পারে ছয় মাসের কারাদণ্ড, জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ড।

৬. নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হট্টগোল সৃষ্টি
আইন: রেলওয়ে আইনের ১৪৫ ধারা।

মদ্যপ বা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ট্রেনে সহযাত্রীদের সঙ্গে ঝামেলা, ঝগড়া বা বিরক্ত করা একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর অপরাধ। এর ফলে রেলওয়ে পুলিশ সরাসরি গ্রেফতার করতে পারে। শাস্তি ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা।

৭. ট্রেনে দাহ্য জিনিসপত্র বহন
আইন: রেলওয়ে আইনের ১৬৪ ধারা।

গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোল, কেরোসিন, আতশবাজি বা অন্যান্য দাহ্য বস্তু নিয়ে ভ্রমণ করা গুরুতর অপরাধ। এই ভুল পুরো ট্রেনের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে এবং এর ফলে কারাদণ্ড এবং মোটা অঙ্কের জরিমানা হতে পারে।

৮. রেলওয়ে স্টেশন বা ট্রেনের সম্পত্তি নষ্ট
আইন: রেলওয়ে সম্পত্তি (বেআইনি দখল) আইন।

ট্রেন বা স্টেশনের সিট, ট্যাপ, লাইট, পাখা বা অন্য যেকোনো সম্পত্তি ভাঙা বা চুরি করা শাস্তিযোগ্য। এর ফলে পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।

৯. মহিলা যাত্রীদের হয়রানি বা দুর্ব্যবহার
আইন: রেলওয়ে আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধি।

ট্রেনে বা স্টেশনে কোনো মহিলার হয়রানি করা বা দুর্ব্যবহার করা কেবল রেলওয়ে আইনের অধীনেই নয়, ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনেও জামিন অযোগ্য অপরাধ। এই বিষয়ে রেলওয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নেয় এবং কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

১০. সিগন্যাল, ট্র্যাক বা সরঞ্জামে হস্তক্ষেপ
আইন: রেলওয়ে আইনের ১৫০ এবং ১৫২ ধারা।

ট্র্যাক খোলা, সিগন্যালে ত্রুটি সৃষ্টি করা, বা ট্র্যাক বাধাগ্রস্ত করা হলো ‘ভ্রমণকে বিপজ্জনক করে তোলা’র মতো গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে, কারণ এটি পুরো ট্রেনকে বিপন্ন করতে পারে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy