দিল্লির একটি বেসরকারি স্কুলের ১৬ বছরের ছাত্র শৌর্য পাটেলের আত্মহত্যার (Delhi Student Death Case) ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল। শৌর্য দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিল এবং তার মাথায় আত্মহত্যা নিয়ে নানারকম চিন্তা চলছিল বলে দাবি করেছে তার সহপাঠীরা। এমনকি, শিক্ষকরা প্রায় প্রতিদিনই শৌর্যকে অপমান ও হেনস্থা করতেন বলে তারা স্বীকার করেছে।
সহপাঠীদের বিস্ফোরক অভিযোগ:
শৌর্যর অকালমৃত্যুর বিচার চেয়ে বৃহস্পতিবার স্কুলের সামনে সহপাঠীরা যে স্মরণসভার আয়োজন করে, সেখানে তারা একাধিক গুরুতর অভিযোগ তোলে:
-
কাউন্সিলরকে সতর্কতা: তাদের দাবি, মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগেই শৌর্য স্কুল কাউন্সিলরকে জানিয়েছিল যে তার মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা (Suicidal Thoughts) ঘুরছে।
-
লাগাতার অপমান: ক্লাসে সামান্য কথা বললেই বা কোনো বিষয়ে প্রশ্ন তুললেই তাকে ‘অসভ্য’ (Impudent), ‘অভদ্র’ বলা হত। এমনকি, শিক্ষকদের অপমানের শিকার হতেন তার বাবা-মা-ও।
-
প্রকাশ্যে ব্যঙ্গ: শৌর্যের এক বন্ধুর অভিযোগ, নাচের অনুশীলনের সময় এক শিক্ষক প্রকাশ্যেই তাকে ব্যঙ্গ করেন। সেই সময় চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির হেডমিস্ট্রেস অপরাজিতা পালও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
পরিবারের অভিযোগ ও স্কুলের ভূমিকা:
শৌর্যের বাবা প্রদীপ পাটেল এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রায় এক বছর ধরে তাঁদের ছেলে বাড়িতে স্কুলে অপমানের কথা বলত।
-
স্কুলের অবহেলা: প্রতিবার স্কুলে অভিযোগ জানাতে গেলে শিক্ষকরা বিষয়টি হেলাফেলা করতেন এবং উল্টে বলতেন, শৌর্যের পড়ায় মন নেই বলে নম্বর কমছে।
-
টিসি-র হুমকি: প্রদীপবাবুর অভিযোগ, একসময় স্কুল থেকে শৌর্যকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (TC) দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।
মৃত্যুর দিনের ঘটনা:
ঘটনার দিন স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের রিহার্সাল চলছিল।
-
নাচের অনুশীলনের সময় শৌর্য হঠাৎ পড়ে গেলে সে কান্না শুরু করে। তখন শিক্ষকরা তাকে রিহার্সাল থেকে বাদ দেন।
-
শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, শৌর্য ইচ্ছে করে পড়ে গেছে এবং অভিনয় করছে। এক শিক্ষক সরাসরি বলেছিলেন, “যত খুশি কাঁদো, আমার কিছু যায় আসে না।” অভিযোগ, স্কুলের প্রিন্সিপাল উপস্থিত থাকলেও তিনি কোনও পদক্ষেপ নেননি।
সুইসাইড নোটের মর্মস্পর্শী বার্তা:
সাধারণত ড্রাইভারের সঙ্গে বাড়ি ফিরলেও, সেদিন শৌর্য স্কুলের পিছনের গেট দিয়ে একাই বেরিয়ে যায় এবং মেট্রো স্টেশনে পৌঁছে আত্মহত্যা করে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। মৃত্যুর আগে শৌর্য পরিবারকে উদ্দেশ্য করে একটি সুইসাইড নোট রেখে গেছে:
-
শিক্ষকদের নাম: সুইসাইড নোটে তিনজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করেছে ওই পড়ুয়া।
-
শেষ বার্তা: সে লিখেছে, “মা, তোমাকে অনেকবার কষ্ট দিয়েছি, এটাই শেষবার। স্কুলের শিক্ষকরা যেমন, আর কী বলব…” ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে লিখেছে, সে যেন তাকে ক্ষমা করে দেয়। বাবাকে লিখেছে, “তোমার মতো ভাল মানুষ হতে পারলাম না।”
-
অঙ্গদানের ইচ্ছা: সবশেষে চিঠিতে সে তার অঙ্গ দান করার ইচ্ছাও জানিয়ে গেছে— “আমার শরীরের কোনও অংশ যদি কাজের মতো থাকে, তাহলে কাউকে দান করে দিও।”