বিহারের রাজনীতিতে ফের একবার নিজেদের অপরিহার্যতা প্রমাণ করলেন জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশ কুমার। সব নাটকীয়তা এবং জল্পনার জাল ছিন্ন করে, এই নিয়ে দশমবারের মতো তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন। আগামীকালই তাঁর শপথগ্রহণের সম্ভাবনা রয়েছে।
নীতীশ সমর্থকদের মুখে এখন একটাই কথা, ‘টাইগার অভি জিন্দা হ্যায়’ (বাঘ এখনও বেঁচে আছে)। এই বয়সেও তিনি যে বিহারের রাজনীতির চালক, তা আরও একবার প্রমাণিত হলো।
মন্ত্রিসভা গঠনের তৎপরতা তুঙ্গে, নীতীশই নেতা
মুখ্যমন্ত্রী পদে নীতীশ কুমারের নাম চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই বিহারে মন্ত্রিসভা গঠনের তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে।
-
এনডিএ-র বৈঠক: এদিন পাটনায় এনডিএ বিধায়কদের এক জরুরি বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে নীতীশ কুমারকে তাঁদের নেতা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
-
চিরাগের সমর্থন: বৈঠকে নীতীশ কুমার ছাড়াও চিরাগ পাসওয়ানের মতো তরুণ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের আগেই চিরাগ স্পষ্ট করে দেন, মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন নীতীশই।
এনডিএ-এর বিধায়কদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত সিলমোহর দেওয়ায়, জেডিইউ প্রধানের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
সহজ ছিল না এ বারের পথ
যদিও এ বারের পথটা নীতীশের জন্য একেবারেই মসৃণ ছিল না। ভোটের আগে তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধীরা যেমন প্রশ্ন তুলেছিল, তেমনই এনডিএ জোটের মধ্যেও তাঁর জনপ্রিয়তা নিয়ে চাপা গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। কিন্তু সমস্ত চ্যালেঞ্জকে উপেক্ষা করে তাঁর নেতৃত্বেই এনডিএ নির্বাচনে অংশ নেয় এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন যে জোট জিতলে নীতীশই হবেন মুখ্যমন্ত্রী।
রহস্য দানা বাঁধল ফল প্রকাশের পর
মুশকিল শুরু হয় ভোটের ফল প্রকাশের পর। দেখা যায়, নীতীশের দল জেডিইউ-এর থেকে ‘ছোট ভাই’ বিজেপি বেশি আসনে জয়ী হয়েছে। এরপর থেকেই নীতীশ কুমারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়।
এমনকী, জেডিইউ তাদের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা একটি পোস্টও মুছে ফেলেছিল। এই ঘটনা রাজনৈতিক মহলে আরও রহস্য বাড়ায়। অনেকেই ধরে নেন যে হয়তো এবার অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসতে পারেন।
অমোঘ নীতীশ ম্যাজিক: ‘বিহারের বিকল্পহীন মুখ’
কিন্তু পরিস্থিতি যাই হোক, বিহারের রাজনীতিতে নীতীশ কুমারের জনপ্রিয়তা আজও তুঙ্গে। তাঁর সমর্থকরা মনে করেন, তিনি বিহারের রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে চেনেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্ভবত এই বিষয়টাই বুঝতে পেরেই প্রধানমন্ত্রী মোদী ও অমিত শাহ শেষমেশ নীতীশকে অগ্রাহ্য করতে পারলেন না। তাঁরা উপলব্ধি করলেন, বিহারের সরকার চালানোর জন্য নীতীশ কুমারের কোনো বিকল্প নেই। তিনিই এখনও পর্যন্ত সবথেকে নির্ভরযোগ্য মুখ। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই জেডিইউ প্রধান ফের মসনদে যাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তাই বলা যায়, এই মুহূর্তে বিহারের রাজনীতির রাজা নীতীশ। তিনি প্রমাণ করলেন, এই বয়সেও তিনি খেলা ঘোরাতে জানেন, পাল্টে দিতে পারেন বাজির শেষ চাল।