উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার যদুরহাটিতে ফের ‘SIR-আতঙ্কে’ এক প্রৌঢ়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। সরকারি নথিপত্রে ভুল সংশোধন করতে না পারার মানসিক চাপ ও ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে’ যাওয়ার ভয়ে শফিকুল মণ্ডল (৫৭) নামে ওই ব্যক্তি কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। এই ঘটনায় বুধবার বাদুড়িয়া জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
নথিতে ভুলের সূত্রপাত:
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বাদুড়িয়ার যদুরহাটিতে কয়েক পুরুষ ধরে বসবাস করতেন শফিকুল মণ্ডল। ২০০২ সালে প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। সমস্যা তৈরি হয় দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর বয়সের পরিচয়পত্র নিয়ে। তাঁর পরিচয়পত্রে যে বয়স দেওয়া আছে, তার সঙ্গে শফিকুলের প্রথম পক্ষের সন্তানের বয়সের ফারাক ছিল মাত্র পাঁচ থেকে সাত বছর। এই সরকারি নথিতে গরমিল থাকায় প্রবল উদ্বেগে ছিলেন ওই প্রৌঢ়।
‘SIR-আতঙ্কে’ আত্মহনন:
মৃতের ছেলে রুহুল আমিন মণ্ডল জানান, “বাবার নথিপত্রে সমস্যা ছিল না, সমস্যা ছিল আমাদের কাগজপত্রে… গত ১৫ দিন ধরে সেই নথিপত্র ঠিক করার জন্য বাবা বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করেছিলেন। কিন্তু, তারপরও সেই নথি ঠিক করতে পারেননি।”
রুহুল আমিন আরও বলেন, ভুল সংশোধন করতে না পেরে শফিকুল মণ্ডল প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান। গত পাঁচ-ছ’দিন ধরে তিনি খাওয়া-দাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। “অনেকেই বাবাকে বলেছিল এ বার ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’-এ যেতে হবে। তারপর থেকেই উনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। এসআইআর আতঙ্কেই বাবা নিজের জীবন শেষ করে দিলেন।”
পরিবারের সদস্যদের নজর এড়িয়ে শফিকুল বাড়ির পিছনে চাষের জমিতে গিয়ে কীটনাশক খান। তাঁকে উদ্ধার করে বাদুড়িয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেখানেই বুধবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।
রাজনৈতিক চাপানউতোর:
এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর সামনে আসতেই বঙ্গ রাজনীতিতে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। শাসক শিবির তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনার জন্য সরাসরি বিজেপিকে কাঠগড়ায় তুলেছে। অন্যদিকে, গেরুয়া শিবির পাল্টা তৃণমূলের ‘অপপ্রচার’-কেই দায়ী করেছে। বাদুড়িয়ার তৃণমূল বিধায়ক কাজি আব্দুর রহিম বুধবার মৃতের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।