বিহার বিধানসভা নির্বাচনে আরজেডি-র (RJD) ভরাডুবির সম্পূর্ণ দায় নিজের কাঁধে নিয়ে বিরোধী দলনেতার পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন তেজস্বী যাদব (Tejashwi Yadav)। সূত্রের খবর, দলের পর্যালোচনা বৈঠকে তিনি স্পষ্টভাবে জানান যে, তিনি এখন একজন সাধারণ বিধায়ক হিসেবেই কাজ করতে চান এবং বিরোধী দলনেতার পদে থাকতে রাজি নন। তাঁর হতাশ মন্তব্য, “আমি চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু সফল হতে পারলাম না। ফলাফলের দায়ভার আমিই নিচ্ছি।”
তবে তেজস্বীর এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে রাজি নন দলের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্ষীয়ান নেতা লালুপ্রসাদ যাদব (Lalu Prasad Yadav)। লালু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, তেজস্বীকেই দলের মুখ হিসেবে বিধানসভায় নেতৃত্ব দিতে হবে। দলের সিনিয়র নেতাদেরও একই মত—দলকে সক্রিয় ও সঙ্ঘবদ্ধ রাখতে নেতৃত্বের আসন ছাড়া কোনোভাবেই চলবে না।
পরিবারের অন্দরে বিতর্ক: সঞ্জয় যাদবকে রক্ষা করলেন তেজস্বী
পর্যালোচনা বৈঠকে তেজস্বী তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী, রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় যাদবকে (Sanjay Yadav) দলের খারাপ ফলের জন্য দোষারোপ করার বিরুদ্ধে জোরালো বার্তা দেন। তিনি জানান, নির্বাচনী কৌশল তৈরিতে সঞ্জয় যাদবের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
কিন্তু এই সঞ্জয় যাদবই এখন পরিবারের বিবাদের কেন্দ্রে। তেজস্বীর দিদি রোহিণী আচার্য (Rohini Acharya) আগেই অভিযোগ তুলেছিলেন যে, সঞ্জয় যাদব তাঁকে পরিবার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। ভোটের ফলের পর রোহিণীর ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। টুইটে তিনি লেখেন, “সঞ্জয় যাদব আর রমিজ আমাকে এটাই করতে বলেছিলেন… এখন আমাকেই সব দোষ নিতে হচ্ছে।” তিনি আরও দাবি করেন, তেজস্বী ও তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী দায় এড়াতে চাইছেন।
এ প্রসঙ্গে লালুপ্রসাদ যাদবের মন্তব্য, “এটা পুরোপুরি পারিবারিক ব্যাপার। পরিবারেই মিটিয়ে নেব। আমি আছি।”
ভোটের ফল বিশ্লেষণ
২০২০-র নির্বাচনে সবচেয়ে বড় দল হওয়া সত্ত্বেও এইবার আরজেডি-কে মাত্র ২৫টি আসনে (আগেরবারের চেয়ে ৫০ কম) থেমে যেতে হয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপি এক লাফে ৭৪ থেকে ৮৯-এ এবং নীতীশ কুমারের জেডিইউ ৪৩ থেকে ৮৫-এ পৌঁছেছে। ২৪৩ সদস্যের বিধানসভায় এই দুই শরিকের প্রায় ৮৫ শতাংশ স্ট্রাইক রেট এনডিএ-কে একটি শক্তিশালী সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছে।
তবে, বিরোধী শিবিরে একমাত্র স্বস্তির জায়গা হলো ভোট শেয়ার। বিজেপি এবং জেডিইউ-র যেখানে যথাক্রমে ২০.৯০% এবং ১৮.৯২%, সেখানে আরজেডি একাই পেয়েছে ২২.৭৬% ভোট শেয়ার। তেজস্বী যাদব অবশ্য তাঁর নিজস্ব আসন রাঘোপুরে প্রায় ১৪,৫৩২ ভোটে বিজেপির সতীশ কুমারকে পরাজিত করে মহাগঠবন্ধনের মুখ হিসেবে নিজেদের স্থান ধরে রেখেছেন। তেজস্বীর সঙ্গী রাহুল গান্ধী ফলাফলকে “অন্যায্য নির্বাচনের” প্রতিফলন বলে দাবি করেছেন।