সুবিচারের কাছে মাথা নোয়ালো আইন! ১০ বছরের কারাবাস থেকে মুক্তি পেলেন যুবক, রায় সুপ্রিম কোর্টের

ভালোবাসা এবং লালসার ফারাক রয়েছে—এমন পর্যবেক্ষণ করে এক ব্যতিক্রমী মামলায় গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। পকসো (POCSO) মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে ১০ বছরের কারাবাস হওয়া এক যুবককে শাস্তি থেকে মুক্তি দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত।

বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসীহার ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, এই দম্পতি এখন তাঁদের শিশুসন্তান নিয়ে সুখে-শান্তিতেই সংসার করছে। বিচারপতিদের মতে, ব্যতিক্রমী ঘটনা হলে সুবিচার নিশ্চিত করতে আইনের কঠোরতাকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।

⚖️ ‘আইন কঠোর হলেও অবিচার তো হতে পারে না’

আদালত এই রায়ের আগে বিচারপতি বেঞ্জামিন কারডোজ়োর উদ্ধৃতি ব্যবহার করে জানায়, ‘সমাজের মঙ্গলের জন্যই আইন তৈরি হয়েছে।’

যদিও আইন মেনে যুবককে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল এবং তাঁর ১০ বছরের জেল হয়েছিল, তবুও শীর্ষ আদালত এই মামলাটিকে এমন একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা বলে মনে করেছে, যেখানে সুবিচার নিশ্চিত করতে আইনের কঠোরতাকে দূরে সরিয়ে রাখা প্রয়োজন।

📜 স্ত্রীর হলফনামায় নজিরবিহীন রায়

সূত্রের খবর, এক নাবালিকার সঙ্গে সহবাসের দায়ে ওই যুবকের কারাবাস হয়েছিল। কারাবাসের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে যুবক সুপ্রিম কোর্টে আপিল মামলা করেন। মামলার শুনানিতে তাঁর স্ত্রী (যিনি পূর্বে নির্যাতিতা ছিলেন) আদালতে একটি গুরুত্বপূর্ণ হলফনামা জমা দেন।

  • স্ত্রীর দাবি: তিনি তাঁর স্বামী (দোষী সাব্যস্ত হওয়া যুবক) ও শিশুসন্তানকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে সংসার করতে চান। তিনি স্বামীকে ভরসা করেন এবং তাঁর উপর নির্ভরশীল।
  • আবেদন: তিনি চান না তাঁর স্বামীকে অপরাধী বলে দাগিয়ে দেওয়া হোক।

হলফনামা পড়ে বিচারপতিরা জানান, আইন অনুযায়ী গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া কোনো ব্যক্তির সঙ্গে আপোস চলে না। কিন্তু এই ক্ষেত্রে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর সমবেদনা অবজ্ঞা করা হলে তা ‘অবিচার’ করা হবে। বিশেষ করে যখন মহিলা নিজেই চাইছেন ওই যুবকের সঙ্গে শান্তিতে সংসার করতে।

⚠️ সুপ্রিম কোর্টের কঠোর শর্ত

 

যুবককে কারাবাস থেকে মুক্তি দেওয়া হলেও তাঁর উপর কঠোর শর্ত আরোপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট:

  • দায়িত্ব: যুবককে অবশ্যই তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে কোনোদিন ছেড়ে যাবেন না।
  • জীবনযাপন: তিনি তাঁদের মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে সাহায্য করবেন।
  • ফলাফল: সুপ্রিম কোর্টের নজরে যদি আসে যুবক তাঁর কর্তব্য পালন করছেন না, তবে তার ফল ভালো হবে না এবং তাঁকে ফের শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে।

এই ঐতিহাসিক রায় ভালোবাসা, বিশ্বাস এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটের সামনে আইনের কঠোরতা কিছুটা শিথিল হওয়ার এক নজিরবিহীন উদাহরণ সৃষ্টি করল।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy