পেটের ছোট-বড় সমস্যায় কমবেশি আমরা সবাই ভুগি। তবে অনেক সময় সাধারণ সমস্যা ভেবে আমরা বড় রোগের লক্ষণগুলোকে উপেক্ষা করে ফেলি। তেমনই একটি গুরুতর সমস্যা হলো মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, যাকে অনেকে অর্শ বা কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ ভেবে ভুল করেন। কিন্তু এটি হতে পারে কোলন ক্যানসারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই কোলন ক্যানসার দেখা যায়, তবে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। গবেষকরা বলছেন, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি প্রায় ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনা যায়।
কোলন ক্যানসার কেন হয় এবং কাদের ঝুঁকি বেশি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোলন ক্যানসারের একটি অন্যতম কারণ হলো বংশগত প্রভাব। যদি পরিবারের কারো এই রোগ থাকে, তাহলে অন্যদেরও ঝুঁকি বেড়ে যায়। MSH3 ভাইরাস জিনের মাধ্যমেই এক দেহ থেকে অন্য দেহে এই ক্যানসার ছড়িয়ে পড়তে পারে। মানবদেহের মলাশয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো কিছু পলিপ তৈরি হয়। প্রাথমিক অবস্থায় এর চিকিৎসা না করালে এটি ধীরে ধীরে কোলন ক্যানসারে রূপ নেয়।
সাধারণত ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে কোলন ক্যানসার বেশি দেখা যায়। তবে বর্তমান জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের কারণে ৩০-৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যেও কোলন ক্যানসার বা রেকটাল ক্যানসারের প্রকোপ বাড়ছে। ব্রিটেনে কোলন বা রেকটাল ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
কোলন ক্যানসার চিনবেন কীভাবে?
অর্শ, পাইলস বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায়ও মলত্যাগের সময় রক্ত বের হয়, ঠিক তেমনই কোলন বা রেকটাল ক্যানসার হলেও মলের সঙ্গে রক্ত দেখা যায়। তাহলে আলাদা করে কোলন ক্যানসার চেনার উপায় কী?
অঙ্কোলজিস্ট বা ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মলত্যাগের সময় যদি রক্ত বের হয়, তাহলে অবশ্যই মলের রং ভালো করে লক্ষ্য করুন। মলের রংই বলে দেবে শরীরে কোলন ক্যানসার বাসা বেঁধেছে কি না!
রক্তের রং যদি গাঢ় বা কালো হয়, তাহলে তা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়।
পাইলস বা কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে মলের সঙ্গে যে রক্ত বের হয়, তা সাধারণত বাদামী রঙের হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, যদি মলের রং গাঢ় বাদামী বা কালচে লাল হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এছাড়া, কোলন ক্যানসার হলে খাওয়ার সময় তলপেটে ব্যথাও হতে পারে।
ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কখনো মলের সঙ্গে রক্ত বের হয়, তাহলে তার রং এবং কতবার এমনটা হচ্ছে, সেদিকে ভালো করে খেয়াল রাখুন। যদি প্রায়ই এই সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য। সময় মতো রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা গ্রহণ করলে কোলন ক্যানসার থেকে আরোগ্য লাভ সম্ভব।