দেশের অন্যতম ধনী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তিরুপতির শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে ঘটল এক চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনা। মন্দিরের মঠের একজন সাধারণ কেরানি, বছরের পর বছর ধরে দানবাক্স থেকে সামান্য সামান্য অর্থ চুরি করে প্রায় ১০০ কোটিরও বেশি সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা মন্দির কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির গভীর ছবি সামনে এনেছে।
কেরানি থেকে ১০০ কোটির মালিক!
মঠের নাম পেড্ডা জিয়ানগর মঠ। অভিযুক্ত কেরানির নাম সি. ভি. রবি কুমার, যিনি ১৯৯০-এর দশকে চাকরিতে যোগ দেন। তাঁর মূল দায়িত্ব ছিল প্রতিদিন মন্দিরে জমা পড়া দানবাক্সের (হুন্ডি) টাকার হিসাব রাখা ও গণনা করা। প্রতিদিন এই মন্দিরে গড়ে চার থেকে ছয় কোটি টাকা দান জমা পড়ে।
তদন্তে জানা যায়, রবি কুমার দীর্ঘদিন ধরে অল্প পরিমাণে টাকা সরিয়ে রাখতেন, যাতে বড় অঙ্কের ঘাটতি সহজে কারও চোখে না পড়ে। ধীরে ধীরে সেই টাকার অঙ্ক বাড়তে থাকে। পুলিশ ও মন্দির কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে তিনি সেই অর্থ দিয়ে বিভিন্ন শহরে জমি, ফ্ল্যাট, ব্যবসা এবং বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছেন। তদন্তে উঠে এসেছে, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ বর্তমানে ১০০ কোটিরও বেশি।
সিসিটিভি ও ডলারের নোট ধরিয়ে দিল চোরকে
প্রাথমিকভাবে রবি কুমারের কাজে কোনো অসঙ্গতি চোখে পড়েনি। কিন্তু ২০২৩ সালে এক নিরাপত্তারক্ষীর চোখে সিসিটিভি ফুটেজে তাঁর সন্দেহজনক আচরণ ধরা পড়ে।
এরপর ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে আটক করেন এবং তল্লাশির সময় তাঁর শরীরে লুকানো অবস্থায় পাওয়া যায় ন’টি ১০০ ডলারের নোট। এই ঘটনাই দীর্ঘ কয়েক দশকের দুর্নীতির পর্দাফাঁস করে দেয়।
TTD-এর জরুরি বৈঠক, কঠোর হচ্ছে নিরাপত্তা
ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই মন্দির কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন হতবাক। কারণ, একজন সাধারণ কেরানির পক্ষে এত বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা কার্যত অকল্পনীয় ছিল।
পুলিশ ইতিমধ্যেই রবি কুমারকে গ্রেফতার করেছে এবং তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সম্পত্তি ও আর্থিক লেনদেনের সমস্ত নথি জব্দ করেছে। তিরুপতি তিরুমলা দেবস্থানম (TTD) কর্তৃপক্ষ এক জরুরি বৈঠক ডেকে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, সেজন্য মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নজরদারি আরও জোরদার করা হবে। একজন আধিকারিক ভক্তদের আশ্বস্ত করে বলেন, “আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে চলেছি। ভক্তদের অনুদান ভবিষ্যতেও সঠিকভাবে ব্যয় করা হবে।”
এই ঘটনা শুধু মন্দিরের সুনামকেই আঘাত করেনি, বরং ভক্তদের মনেও গভীর ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষের দাবি, দেশের ধর্মীয় স্থানগুলিতে স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক।