‘থাকতে হয়েছে ৬ ঘণ্টা, মনে হচ্ছিল বেঁচে আছি তো!’ নায়কের ডামি সেজেও অন্ধকারে অ্যাকশন তারকারা, বিস্ফোরক চিত্ত কবিরাজ

সিনেমা দেখতে বসে দর্শকরা খোঁজেন অ্যাকশন, আর সেই অ্যাকশনকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে যাঁরা নিজেদের জীবন বাজি রাখেন, সেই স্টান্টম্যানদের গল্প বরাবরই থাকে লোকচক্ষুর আড়ালে। বাংলা সিনেমার দর্শক সম্প্রতি ‘রক্তবীজ ২’-এর একটি রুদ্ধশ্বাস অ্যাকশন দৃশ্য দেখেছেন, যেখানে অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায় এবং অঙ্কুশ হাজরাকে একটি টাওয়ারের মাথায় একে অপরের সঙ্গে ফাইটে লিপ্ত হতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্যের নেপথ্যে আসল নায়ক কারা ছিলেন, তা জানালেন প্রখ্যাত ফাইট মাস্টার ও স্টান্টম্যান চিত্ত কবিরাজ।

চিত্ত কবিরাজ ইটিভি ভারতের প্রতিনিধিকে জানান, ‘রক্তবীজ ২’-এর সেই ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যে আবিরের ডামি হিসেবে কাজ করেছেন তিনি এবং অঙ্কুশের ডামি হিসেবে ছিলেন বাপি। পর্দার দুই উজ্জ্বল তারকার অ্যাকশনের পিছনে নিজেদের জীবন বাজি রেখেছিলেন এই স্টান্টম্যানরাই।

‘রক্তবীজ ২’ ছিল জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ
চিত্ত কবিরাজ তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে ‘রক্তবীজ ২’-এর টাওয়ার ফাইটটিকে সবচেয়ে কঠিন কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, “আমার জীবনের এখনও অবধি সবথেকে শক্ত কাজ ‘রক্তবীজ ২’। আবির দা’র হয়ে টাওয়ারের উপর অঙ্কুশের সঙ্গে ফাইটটা আমারই করা… খুব রিস্ক ছিল ওই কাজটায়।”

কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে হওয়া এই শুটের অভিজ্ঞতা ছিল চরম প্রতিকূল। তিনি জানান, “টাওয়ারের মাথায় যে লাইটটা জ্বলছিল সেটা ৫০ মিনিট জ্বলার কথা। কিন্তু শুটিংয়ের কারণে সেটা জ্বলেছে ৬ ঘণ্টা। ওই লাইটগুলোর তাপে থাকা যে কতটা কঠিন তা যারা থাকে তারা জানে। আমাদের থাকতে হয়েছে ওভাবে। যখন ১৪০ ফুট উঁচু টাওয়ার থেকে ঝুলছিলাম, মনে হচ্ছিল আমি বেঁচে আছি তো?”

জীবন বাজি রেখেও পারিশ্রমিক না পাওয়ার আক্ষেপ
চিত্ত কবিরাজ শুধু ‘রক্তবীজ ২’-এর কথাই বলেননি, ফাইট মাস্টার, অ্যাকশন ডিরেক্টর তথা স্টান্ট ম্যান হিসেবে কুড়ি বছরের কর্মময় জীবনে ৩০০টিরও বেশি ছবিতে কাজ করা এই মানুষটি তুলে ধরেছেন এই পেশার নির্মম বাস্তবতা। তিনি বলেন, “একটা ছবিতে স্টান্টম্যান কিন্তু খুব ইমপর্ট্যান্ট একজন মানুষ। এই কাজ করতে গিয়ে তাঁরা দুর্ঘটনারও শিকার হন। ঝুঁকি থাকে প্রতি মুহূর্তে… কিন্তু খুব খারাপ লাগে তখন, যখন জীবনকে বাজি রেখে এত কঠিন কাজ করার পরও সঠিক পারিশ্রমিক আমরা পাই না। যে টাকা পাই, তা না পাওয়ারই মতো। এমনকী সময়মতোও পাই না।” যদিও ফেডারেশনে অভিযোগ জানালে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টাকা আদায় হয়ে যায় বলে তিনি জানান।

অন্ধকারে থেকে যাওয়ার যন্ত্রণা
চিত্ত কবিরাজ স্বীকার করেন যে ডামি হিসেবে কাজ করলে দর্শক তাঁদের কথা জানতেই পারবেন না। তবে এই পেশায় থেকে যাওয়ার কারণ শুধুমাত্র পেশার তাগিদ নয়, কাজের প্রতি ভালোবাসা।

অভিনেতাদের হয়ে এত ঝুঁকি নেওয়ার পরও কেউ এগিয়ে এসে বাহবা দেন কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি ‘রক্তবীজ ২’-এর শুটিংয়ের একটি মুহূর্তের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমি টাওয়ার থেকে নামার পর শিবু দা (শিবপ্রসাদ মুখার্জি) আমাকে ২-৩ মিনিট জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। আমার জন্য হাততালি দিতে বলেছিলেন সকলকে। ওই ততক্ষণের জন্যই। তার পরে আর কেউ চেনে না আমাদের…।”

প্রসঙ্গত, এই চিত্ত কবিরাজ ‘বহুরূপী’ ছবিতেও প্রথম দিকের গাড়ি চেজিং-এর দৃশ্যে ডাকাতের চরিত্রে অভিনয় করেন এবং তিন-চারজনের ডামি হিসেবে কাজ করেছিলেন। বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি সহ মোট সাতটি ভাষায় ফাইটার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy