সিওনি জেলার ‘হাউয়াল লুটকাণ্ড’-এর পর এবার বালাঘাটে পুলিশের হেফাজতে রাখা লাখ লাখ টাকা চুরির ঘটনা সামনে আসায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কোতোয়ালি থানার মালখানা (লকআপ) থেকে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ লক্ষ টাকা চুরি করেছেন খোদ মালখানার ইন-চার্জই!
এছাড়াও, অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং সোনা-রুপোর গহনাও চুরি হয়েছে, যার মোট মূল্য প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ লক্ষ টাকা বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই নগদ অর্থ ও গহনাগুলি প্রায় ৩২টি ফৌজদারি মামলায় পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছিল। পুলিশের হেফাজতে থাকা সম্পত্তির এই অপব্যবহারের ঘটনায় বিভাগ জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
জুয়া-সত্তার নেশা কেড়ে নিল অর্থ
সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই ঘটনার নেপথ্যের গল্প পুলিশকে অত্যন্ত লজ্জিত করেছে। অভিযুক্ত কার্যনির্বাহী প্রধান আরক্ষক রাজীব পন্দ্রে দীর্ঘ দিন ধরে মালখানার অর্থ চুরি করছিলেন। সেই অর্থ তিনি মূলত জুয়া এবং সত্তা (বাজি) খেলার পিছনে খরচ করতেন। তিনি সিওনি সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় সরকারি টাকা জুয়া-সত্তার পিছনে ব্যয় করেছেন। সিওনিতে মোটা অঙ্কের টাকা জেতার পর, তিনি গোন্দিয়াতেও জুয়া খেলেন, যেখানে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা হেরে যান। এরপরই তিনি প্রবল মানসিক চাপে ছিলেন। সূত্রের খবর, তিন দিন আগে প্রধান আরক্ষক কোতোয়ালি থানার ভেতরেই ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন।
সন্দেহ গভীর হলো কেন?
প্রধান আরক্ষক রাজীব পন্দ্রে গত দুই বছর ধরে কোতোয়ালি মালখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন এবং চাবিও তাঁর কাছেই থাকত। মালখানা থেকে অর্থ কবে থেকে চুরি হচ্ছিল, তা এখনও নিশ্চিত নয়। পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি পুলিশ সুপার আদিত্য মিশ্রের নেতৃত্বে কিছু মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার পর বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি অভিযোগকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রধান আরক্ষক পন্দ্রে বারবারই সেই হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় গড়িমসি করছিলেন। এই আচরণেই তাঁর ওপর সন্দেহ জোরালো হয়।
বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছলে কোতোয়ালি থানায় তৎপরতা শুরু হয়। ডিএসপি, সিএসপি সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা মঙ্গলবার দিনভর তদন্ত করেছেন।
ব্যবস্থা ও উদ্ধার কাজ
কোতোয়ালি থানার মালখানার ইন-চার্জ রাজীব পন্দ্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৮৮-এর অধীনে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। যদিও তাঁকে এখনও পর্যন্ত বরখাস্ত করা হয়নি।
পুলিশ মালখানাটি সিল করে দিয়েছে এবং বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
পুলিশ প্রধান আরক্ষক পন্দ্রেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। মালখানা ও থানায় লাগানো সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশি তথ্যানুযায়ী, চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে পুলিশ এখনও পর্যন্ত ৪০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করতে পেরেছে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত রাজীব পন্দ্রে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার সোনা-রুপোর গহনা এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে বন্ধক রেখেছিলেন। সেই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
এই ঘটনা নিয়ে প্রাক্তন সাংসদ কঙ্কর মুঞ্জারে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পুলিশ জানিয়েছে, “এই ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্ত এবং জিজ্ঞাসাবাদের পরই চুরি যাওয়া অর্থের সঠিক পরিমাণ জানা যাবে।”