সাহায্যের নাম করে এক প্রবীণ নাগরিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বিপুল অর্থ গায়েব করার অভিযোগে সাইবার প্রতারণা চক্রের পর্দা ফাঁস করল কলকাতা পুলিশ। গত ৭ অক্টোবর উত্তর কলকাতার কাশীপুর থানা এলাকায় ঘটা এই ঘটনার তদন্তে নেমে লালবাজারের সাইবার সেলের আধিকারিকরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ছয়জন যুবককে গ্রেফতার করেছেন।
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রতারকরা নিজেদের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মী পরিচয় দিয়ে কাশীপুরের বাসিন্দা দিলীপ কুমার সিং (৬০)-এর অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৯৯৯ টাকা গায়েব করে দেয়।
কীভাবে শিকার হলেন প্রবীণ নাগরিক?
জানা গিয়েছে, গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি এলাকার বাসিন্দা দিলীপ কুমার সিং মোবাইল ফোনে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অনলাইন পরিষেবা সংক্রান্ত অ্যাপ ডাউনলোড করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন।
তখন তিনি ইন্টারনেটে ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি হেল্পলাইন নম্বর বের করেন এবং সেখানে ফোন করে সাহায্য চান। বৃদ্ধ পুলিশকে জানান, ফোনের ওপারে থাকা যুবক তাঁকে ব্যাংকে যেতে বারণ করে এবং একটি মেসেজে আসা লিংকে ক্লিক করে অ্যাপটি ডাউনলোড করতে বলে।
ফোন আসা লিংকে ক্লিক করার কিছুক্ষণ পরেই দিলীপ কুমার সিংয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সমস্ত টাকা গায়েব হয়ে যায়। তখন তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
তদন্তে নামল সাইবার সেল
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, ব্যাংকের ওয়েবসাইটে নম্বর নিয়ে কল করলে কীভাবে প্রতারকরা সেই কল রিসিভ করল? তদন্তকারীরা মনে করছেন, দিলীপ কুমার সিং ব্যাংকের সঠিক ওয়েবসাইটে না ঢুকে কোনও ফ্রড সাইটে প্রবেশ করেছিলেন, যেখানে প্রতারকদের ভুয়ো নম্বর দেওয়া ছিল।
গত ৭ অক্টোবর কাশীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর মামলাটি কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলে যায়।
প্রথম গ্রেফতার: সাইবার সেলের আধিকারিকরা তদন্তে নেমে প্রথমে বেহালা থেকে সোনি মান্না (২০) এবং আয়ুষ মিদ্যা (২০) নামে দুই তরুণকে গ্রেফতার করেন।
পরবর্তী গ্রেফতার: তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও চার যুবকের নাম জানা যায়। ১৩ অক্টোবর হরিদেবপুর ও রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকা থেকে বাবাই শীল (২৪), পল্লব শেখ (২৩), রাহুল গুপ্ত (২৪) এবং অমিত কর্মকার (২৩)-কে গ্রেফতার করা হয়।
লালবাজার সূত্রে খবর, ধৃতরা একটি সংগঠিত প্রতারণা চক্রের সদস্য। তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, সিম কার্ড এবং একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য উদ্ধার হয়েছে। এই ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার বলেন, “আমরা সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে সবসময় জনসচেতনতা মূলক কাজ করে থাকি। তাও শহরের কোনও না-কোনও প্রান্তে এই সাইবার দস্যুদের খপ্পরে সাধারণ মানুষ পড়ছে।”
পুলিশের তরফে নাগরিকদের সাইবার প্রতারণা সম্পর্কে আরও সজাগ থাকতে আবেদন জানানো হয়েছে।