দীপাবলির আগে রাজস্থান সরকারের ‘‌অদ্ভুত’‌ ফরমান! স্কুল সাজানোর দায়িত্ব কার? শিক্ষকরা কেন রাতারাতি বিপাকে?

দীপাবলির ঠিক আগেই রাজস্থান সরকারের একটি নির্দেশে রাজ্যের সমস্ত সরকারি স্কুল এবং প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। সরকার নির্দেশ জারি করেছে যে, রাজ্যের প্রতিটি সরকারি স্কুলকে দীপাবলির আগে রং করানো এবং সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষ করতে হবে। সরকারের নির্দেশ, ছুটির পর শিশুরা যখন স্কুলে ফিরবে, তখন যেন তারা পরিচ্ছন্ন এবং আকর্ষণীয় স্কুল দেখে নতুন করে শক্তি অনুভব করে।

সরকারি নির্দেশ: স্কুল সাজানো বাধ্যতামূলক
রাজ্য সরকারের আদেশ অনুযায়ী,

স্কুলের সাজসজ্জা: দীপাবলির আগেই রং করানো এবং সৌন্দর্যবর্ধন বাধ্যতামূলক।

দীপদান উৎসব: ১৮ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত স্কুলগুলিতে দীপদান উৎসবের আয়োজন করতে হবে, যেখানে মা লক্ষ্মী, সরস্বতী এবং গণেশজির পূজা-অর্চনা করা হবে।

উদ্দেশ্য: ছুটি শেষে শিশুরা যেন নতুন শক্তি নিয়ে ফিরতে পারে, তার জন্য স্কুলের এই ‘কায়াকল্প’ জরুরি।

বাজেট ঘাটতি ও ছোট স্কুলের সমস্যা
সমস্যা হলো, সরকার এই অভিযানের জন্য কোনো আলাদা বাজেট বরাদ্দ করেনি। রাজ্যের মন্ত্রী অবিনাশ গেহলত জানিয়েছেন, আদেশে স্পষ্ট লেখা আছে যে রং করানোর খরচ ‘বিদ্যালয় তহবিল’ থেকে করতে হবে।

যে স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বেশি, সেখানে কিছু টাকা থাকলেও, ছোট স্কুলগুলিতে, বিশেষ করে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলগুলিতে তহবিল প্রায় শূন্য।

রাজস্থানে হাজার হাজার এমন স্কুল আছে যেখানে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়া হয় না। ফলে, এখন এই স্কুলগুলির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, রং করানোর টাকা কোথা থেকে আসবে?

সময় ও শ্রমিকের সংকট
মাধ্যমিক শিক্ষা দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে রং করানোর কাজ শেষ করতে হবে। এরপর ১৮ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত দীপদান উৎসব ও আলোকসজ্জার আয়োজন করতে হবে।

সময়ের অভাব: ছোট স্কুলে ৫ থেকে ৭টি ঘর হলেও, বড় স্কুলগুলিতে ২০ থেকে ২৫টি ঘর ও বড় হল রয়েছে। এত কম সময়ের মধ্যে রং করানো এক অসম্ভব কাজ।

শ্রমিক সংকট: উৎসবের মরসুম হওয়ায় রং করার জন্য শ্রমিক পাওয়াও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিক্ষকদের অনুপস্থিতি ও সাহায্যের আবেদন
প্রাক্তন মন্ত্রী প্রতাপ সিং খাচরিয়াবাসের মতে, দীপদান উৎসবের সময় শিক্ষকদের উপস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। ১৩ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত দীপাবলির ছুটি থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষকই পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বা অন্য কোথাও উৎসব পালনের পরিকল্পনা করে ফেলেছেন।

শিক্ষকরা এখন মরিয়া হয়ে সাহায্যের জন্য আবেদন করছেন—কোথাও সরপঞ্চ, প্রধান বা স্থানীয় ব্যবসায়ীর কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে, আবার কোথাও এনজিও-এর কাছে রং করানোর জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু এত হঠাৎ আসা নির্দেশ এবং উৎসবের মরসুমের কারণে প্রত্যাশা মতো সাহায্য মিলছে না।

‘সরকার শিক্ষকদের ওপর অর্থনৈতিক বোঝা চাপাচ্ছে’
বিরোধী দলের নেতা টিকারাম জুলি এই সরকারি আদেশের সমালোচনা করে বলেছেন, “সরকার লোকদেখানোর জন্য শিক্ষকদের ওপর অর্থনৈতিক বোঝা চাপাচ্ছে। অবিলম্বে এই নির্দেশ প্রত্যাহার করা উচিত।”

যদিও সরকারি নির্দেশের মূল উদ্দেশ্য স্কুলগুলির সংস্কার এবং পরিচ্ছন্নতা বাড়ানো, কিন্তু বাজেট এবং পর্যাপ্ত সময়ের অভাবে এই নির্দেশ এখন স্কুল কর্মীদের জন্য রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়েছে।

Related Posts

© 2025 Tips24 - WordPress Theme by WPEnjoy