একসময় যে উত্তরপ্রদেশকে কেবল পিছিয়ে পড়া ও বেকারত্বের প্রতীক হিসাবে দেখা হত, আজ তা দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের নতুন চালিকাশক্তি বা ‘নিউ গ্রোথ সেন্টার’ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে শিল্পোন্নয়নের পথে রাজ্যটি যে গতিতে এগিয়ে চলেছে, তা গোটা দেশকে চমকে দিয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে উত্তরপ্রদেশে রেকর্ড ৪,০০০ নতুন কারখানা স্থাপিত হয়েছে, যার ফলে রাজ্যে মোট কারখানার সংখ্যা এক ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছে ২৭,০০০-এ দাঁড়িয়েছে। এটি কেবল একটি পরিসংখ্যানগত সাফল্য নয়, বরং ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর পথে ‘নতুন উত্তরপ্রদেশ’-এর দৃঢ় পদক্ষেপের প্রতীক।
যোগীর রাজ্যে ইউপি হলো “নিউ ইনভেস্টমেন্ট হাব”
বিগত সাড়ে ৮ বছরে যোগী সরকার শিল্পগুলির জন্য এমন এক অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে, যা বিনিয়োগকারীদের কেবল আকর্ষণই করে না, বরং তাদের দীর্ঘমেয়াদে রাজ্যে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে। বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলিকে স্বচ্ছ এবং বিনিয়োগকারী-বান্ধব করা হয়েছে, যার কারণে উত্তরপ্রদেশ আজ দেশের “নিউ ইনভেস্টমেন্ট হাব” হয়ে উঠেছে।
এখানে স্থাপিত কারখানাগুলির মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিক্স, টেক্সটাইল, ফুড প্রসেসিং, প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদন, অটোমোবাইল, রাসায়নিক এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলির অগ্রণী সংস্থাগুলি।
দ্রুত বেড়েছে শিল্প ভিত্তি
উত্তরপ্রদেশের শিল্পায়নের ইতিহাস এক নজরে দেখলে পরিবর্তনটা স্পষ্ট হয়:
বছর মোট কারখানার সংখ্যা
২০০৩ ৮,৯৮০
২০২১ ১৬,৫০৩
২০২৪ (এএসআই রিপোর্ট) ২২,১৪১
২০২৫ ২৭,০০০
Export to Sheets
এই বৃদ্ধি কেবল সংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি রাজ্যের শিল্প মানচিত্রে কাঠামোগত পরিবর্তনেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন বিনিয়োগ শুধুমাত্র নয়ডা, গ্রেটার নয়ডা বা লখনউ-এর মতো বড় শহরগুলিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বরেলি, কানপুর, ঝাঁসি, গোরখপুর, আজমগড় এবং প্রয়াগরাজের মতো ছোট শহরগুলিতেও ছড়িয়ে পড়েছে।
কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের নতুন যুগ
২০২৩-২৪ সালের এএসআই (ASI) রিপোর্ট অনুসারে, উত্তরপ্রদেশ দেশের শীর্ষ-১৫ শিল্পোন্নত রাজ্যের মধ্যে চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। ওই সময়ে রাজ্যে মোট ২২,১৪১টি কারখানা চালু ছিল, যা দেশের মোট কারখানার প্রায় ৮.৫ শতাংশ।
এই ইউনিটগুলিতে ১২.৮০ লক্ষেরও বেশি কর্মী নিযুক্ত ছিলেন, যা দেশের মোট শিল্পকর্মীর ৮.৩ শতাংশ।
কারখানার বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ১৬ শতাংশ এবং কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৮ শতাংশ।
২০২৫ সালে কারখানার সংখ্যা ২৭ হাজার হওয়া প্রমাণ করে যে, রাজ্যে কেবল শিল্প বাড়ছে না, কর্মসংস্থানের সুযোগও দ্রুতগতিতে বাড়ছে।
গ্রামেও পৌঁছেছে শিল্প বিপ্লব
সরকারের লক্ষ্য কেবল শহুরে শিল্প উন্নয়ন নয়, গ্রামীণ শিল্পায়নকেও উৎসাহিত করা। ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি শিল্প (MSME) ইউনিট এবং স্থানীয় কারিগরদের উৎসাহিত করতে ভর্তুকি, প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা এবং রপ্তানির সুযোগের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের গ্রামীণ এলাকার ছোট শিল্পগুলি আজ ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর ভিত্তি মজবুত করছে। উত্তরপ্রদেশের এই শিল্প বিপ্লবের গল্প কেবল উন্নয়ন নয়, বরং বিশ্বাস, স্বচ্ছতা এবং আমূল পরিবর্তনের এক উদাহরণ তৈরি করছে।