পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর পুরসভায় ফের দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, টেন্ডার জারি হওয়ার আগেই একটি রাস্তা তৈরি হয়ে গেছে এবং সেই দুর্নীতি নিয়ে এবার কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হয়েছেন পুরসভার একাংশ কাউন্সিলর। কাঠগড়ায় রয়েছেন পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নরেশচন্দ্র দাস এবং কয়েকজন আধিকারিক।
কীভাবে হলো এই দুর্নীতি?
দুর্নীতির মূল অভিযোগটি উঠেছে পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কদমতলা ইমারশন ঘাট সংলগ্ন প্রায় ৫০০ মিটার দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণকে ঘিরে।
নিয়ম লঙ্ঘন: নিয়ম অনুযায়ী কাজ শুরুর আগে টেন্ডার জারি করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অভিযোগ, টেন্ডার ইস্যু হওয়ার আগেই রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে।
সময়সীমা: ২৫ সেপ্টেম্বর টেন্ডার নোটিস জারি হয়। টেন্ডার জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৬ অক্টোবর, আর খোলার দিন ২৫ অক্টোবর। অথচ, মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যায়!
অর্থ তছরুপের অভিযোগ: কাউন্সিলরদের দাবি, দুই বছর আগেই একই রাস্তা তৈরি হয়েছিল প্রায় ২৩ লক্ষ টাকায়। সেই চুক্তিতে ৫ বছরের মধ্যে রাস্তা নষ্ট হলে কন্ট্রাক্টরের মেরামত করার কথা ছিল। কিন্তু সেই নিয়ম লঙ্ঘন করে ফের নতুন টেন্ডার ডাকা হয়েছে, এবার খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা, যা আগের খরচের প্রায় দ্বিগুণ!
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে— টেন্ডার ছাড়াই কাজের বরাত পেল কে? কার স্বার্থে সরকারি তহবিল তছরুপ করা হলো?
হাই কোর্টে মামলা দায়ের
এই একাধিক প্রশ্ন তুলে কৃষ্ণনগর পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন চেয়ারপার্সন রীতা দাসসহ মোট ৮ জন কাউন্সিলর কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। তাঁদের দাবি, নিয়ম না মেনে তড়িঘড়ি রাস্তা তৈরির মাধ্যমে সরকারি তহবিল তছরুপ করা হয়েছে এবং ৪৫ লক্ষ টাকার পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়াটিই দুর্নীতির উদ্দেশ্যে সাজানো হয়েছে।
কাউন্সিলরদের অভিযোগ, এই ‘নিয়মবহির্ভূত’ কাজের নেপথ্যে মূল ভূমিকা রয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান নরেশচন্দ্র দাস ও কয়েকজন পুর আধিকারিকের। উল্লেখ্য, এর আগেও এই ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দলীয় নির্বাচিত চেয়ারপার্সনকে অপসারণের অভিযোগ উঠেছিল। এবার ফের তাঁর নাম জড়াল টেন্ডার দুর্নীতির মামলায়।
সূত্রের খবর, হাই কোর্টের পুজো অবকাশকালীন বেঞ্চেই এই মামলার শুনানি হতে পারে। আদালতের রায়ের দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে কৃষ্ণনগর পুরসভা এবং গোটা রাজ্য।